টাঙ্গাইলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলার প্রেক্ষিতে শ্যালক দিয়ে উল্টো মামলা

কালিহাতী টাঙ্গাইল জেলা দেশ জুড়ে

স্টাফ রিপোর্টার:টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা নাগবাড়ী ইউনিয়নের পাইকপাড়া,প্রকাশ রাজবাড়ী গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বনবাসী চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়-বনবাসী চন্দ্র রায় একজন বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি গ্রামে থাকে না । সখিপুরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন এবং তার একটি দোকান আছে। দোকানের নাম-ভাই-বোন বস্ত্রলায়,সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন।মার্কেটের দোকান নং-৪। এলাকাবাসী জানান-পতিশ চন্দ্র মন্ডল ও বনবাসী চন্দ্র ছোট বেলা থেকেই এক সাথে বড় হয়েছে । তারা দুই জন ভালো বন্ধু এবং সম্পর্কে মামাতো পিশাতো ভাই হয়,আমরা শুনেছি ব্যবসায়ের প্রয়োজনে বনবাসি পতিশ চন্দ্র মন্ডলের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা হাওলাত নিয়েছে,কত টাকা নিয়েছে,তা আমরা জানি না । শুনেছি এ বিষয়ে নাকি মামলা হয়েছে ।

এই বিষয়ে পতিশ মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-আমি একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মনপুরা ভোলায় কর্মরত আছি । আমি বনবাসীর নিকট টাকা পাই এবং টাকা না দেওয়ার কারণে আমি মামলা করি । আনুমানিক ১মাস পূর্বে কালিহাতি থানার এসআই সুফিয়া বেগম টেলিফোনে জানায় আমার নামে মামলা হয়েছে । তখন আমি তাকে বলি এ বিষয়ে কোনো কিছু আমি জানি না । কে মামলা করেছে ? তখন তিনি বলেন-কৃষ্ণ সরকার গ্রাম কাঞ্চনপুর । তখন আমি বলি আমি তো তাকে চিনি না । এসআই সুফিয়া বেগম বলেন-সে বনবাসীর শ্যালক । তখন আমি সুফিয়া বেগমকে জানাই বনবাসীর নিকট আমি টাকা পাই।

টাকা না দেওয়ার কারনে এই বিষয়ে আমি মামলা করি । মামলাটি ভোলা কোটে চলমান আবস্থায় আছে । সেই মামলাকে চাপা দেওয়া এবং আমাকে হয়রানি করার জন্য তার শ্যালককে দিয়ে এই মিথ্যা মামলাটি করিয়েছে ।

সংবাদ কর্মীর হাতে মামলার কপি পাওয়ার পর মামলা সূত্রে জানা যায়-পতিশ চন্দ্র মন্ডল এবং বনবাসি চন্দ্র রায় দুইজনে মামাতো পিশাতো ভাই ।ব্যবসার প্রয়োজনে টাকা চাওয়ায় পতিশ মন্ডল বন্ধুর ব্যাবসার কথা চিন্তা করে টাকা দিতে সম্মত হয় এবং ১২-১০-২০২০ইং তারিখে-৯,৫০,০০০/-(নয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা) বনবাসী রায়ের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠান । যাহার হিসাব নং-৬০১৪৫০১০০৯০৫৪ সোনালী ব্যাংক বল্লা বাজার শাখায় ।

যখন বনবাসীর ব্যাবসা ভালোভাবেই চলছিলো । ঠিক সেই সময় পতিশ মন্ডল তার পাওনা টাকা চাইলে কিছু দিন পর টাকা দিয়ে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন । পরে কিছু দিন যাওয়ার পর পতিশ টাকা চাইলে তালবাহানা শুরু করে । পরে তিনি চাপ দেওয়া শুরু করলে বনবাসী একটি চেক প্রদান করেন । যাহার চেক নম্বর-৮০৫২৪৩৪।
পতিশ মন্ডল তাহার কর্মস্থল ভোলা জেলার মনপুরায় । তাই তিনি চেকটি মনপুরার  সোনালী ব্যাংক শাখার  পরিচালিত হিসেব নম্বরের অনলাইনে জমা দিলে দেখা যায় একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। পরে চেকটি ডিজঅনার হয় । এবং সেই ডিজঅনারের কপি দিয়ে পতিশ মন্ডল মামলা করেন। মামলাটি এখন ভোলা জেলার যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে ।

বনবাসী রায়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন-আমি পতিশ চন্দ্র রায়ের বোন জামাইয়ের কাছে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দিয়েছি । আমি কোন টাকা আত্মসাৎ করি নাই । আমার শ্যালক কৃষ্ণ সরকার (২২) কে চাকরি দেওয়ার কথা বলে উল্টো আমাদের কাছ থেকে পতিশ মন্ডল ১০,০০০০০/-টাকা হাতিয়ে নেয় । পরে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার বিরুদ্ধে পতিশ মন্ডল একটি মামলা দায়ের করার পর (যেটা চলমান আছে) তারপরেও আপনারা কেন বা কোন ভরসায় ১০,০০০০০/-টাকা দিলেন । এই প্রশ্নের উত্তর সে এড়িয়ে যান । পরে প্রশ্ন করা হলে কোথায় এবং কার কার উপস্থিতিতে আপনি টাকা প্রদান করেন । বনবাসী জানান-আমার বড় ভাই মাস্টার রমেন্দ্র চন্দ্র রায়ের ঘরে বসে এবং মেম্বার ও গ্রামের ময়মাতাব্বর ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে টাকা দেওয়া হয় ।

এ বিষয়ে বনবাসীর বড় ভাই  রমেন্দ্র চন্দ্র রায়কে বাড়িতে না পাওয়া গেলে তার স্ত্রী মালতী রাণী(৫০)বলেন-আমি জানি না। আমার জানা মতে আমার ঘরে এ ধরনের লেনদেন হয় নাই । যদি হতো তবে আমি অবশ্যই জানতাম ।

একই বাড়ীর বনবাসী চন্দ্র রায়ের মামা সুদর্শন(৭৫), ধীরেন্দ্র মন্ডল (৮০) জিজ্ঞেস করা হলে তারা বিষয়টি জানে না বলে জানায় ।

এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার মো:আব্দুল সামাদ জানান-এক সাথেই ওদের দুই জনের বাড়ী । সবাই সবার আপন জন। বনবাসী যদি অতো চালাক থাকতো তা হলে কী ব্লাইং চেক দিতো । আমার কাছে বনবাসী যখন ছুটে আসে তখন আমি গ্রামে গিয়ে মোশারফ মেম্বার, ফজলু ও ময়মাতাব্বর দের সাথে আলাপ করলাম কি করা যায়। পরে আমরা পতিশ কে ফোন দেই। পতিশ আমাদের তারিখ দিয়েও হাজির করতে পাই নাই। পরে সবার সাথে কথা বলে দশ লক্ষ টাকার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় পতিশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন-পাইকপাড়া,প্রকাশ রাজবাড়ী ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার বলেন-পতিশ মন্ডলকে বার বার খবর দিলেও সে হাজির হয় না । পরে চেয়ারম্যান পরিষদে বসার চেষ্টা করে । সেও ফেল করে । পতিশ সে নিজেকে কী মনে করে । গ্রামের ময়মাতাব্বর সহ আমাদের কাউকে গন্যমাণ্য করে না । সে গ্রামেও আসে না । বনবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে এ বিষয়েও আমাদের জানায় নি । তার কাছে টাকা পায় সে এই বিষয়ে আমাদের কোন অবগত করেনি ।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন-প্রথম পর্যায়ে অস্বীকার করলেও পরে মোবাইলে রেকর্ড করলে সত্য কথা বলা যাবে না। মুবাইল বন্ধ করেন । পরে তিনি মামলাটি সত্য স্বীকার করে বলেন বনবাসী চন্দ্র রায় তার শ্যালক কৃষ্ণ কুমার  সরকারকে দিয়ে যে মামলা দিয়েছে সেটাও মিথ্যা ।আর পতিশ যে মামলা করেছে সেটাও মিথ্যা । তিনি আরো বলেন-আমরা চাই তারা দুইজনে তাদের ঝামেলাটি সমাধান করুক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *