তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের ইঙ্গিত-বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর

ঢাকা দেশ জুড়ে রাজনীতি

নিউজ ডেস্ক: ‘নৌকা মার্কার বাইরে সব মার্কা এক হয়ে নির্বাচন করুক এবং নৌকা মার্কার ডুড়া ভাইঙ্গা দিক। এ জন্য কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং তৃণমূল বিএনপি এই দুই দলের দুই-চারজন প্রার্থী পারস্পরিক দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিক’—এমনটা চান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের লেখা ‘স্বাধীনতা তোমাকে খুঁজছি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সময় সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে আলাপকালে এসব কথা বলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সেই দিনও শুনেছি, তৈমুররা নাকি ইলেকশন করবে। আমি তো ইলেকশন করতে পারব। আমার গামছা নিয়া, আগের থাইকা যদি আমি প্রস্তুত হতাম তাইলে তিন শ সিট, তিন শটাই নমিনেশন দিতাম। হয়তো তিন শ দিতে পারব না, আড়াই শটা তো দিতে পারব? আড়াই শ না পারি দুই শ তো পারব। যদি এমন হয়, এই যে তৃণমূল বিএনপি—তাদের দুই-চাইরজন যদি আমার সঙ্গে আসে বা আমার লোক যদি যায়। আমি সেটাকেও মেনে নেব। আমি তো চাই নৌকা মার্কার বাইরে সব মার্কা এক হইয়া, নৌকা মার্কার ডুড়া ভাইঙ্গা দেক, তলা ফাটাইয়া দিক।’

তিনি ভোট চান, দল চান না—এমনটা উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি ভোট চাই, আমি দল চাই না। কোন দল ইলেকশনে আসলো আর কোন দল আসলো না, এইটা আমার কোনো বিবেচ্যই না। আমার কাছে বিবেচ্য, ভোটে কে দাঁড়িয়েছে আর ভোটাররা অবাধে ভোটকেন্দ্রে গেছে কি না এবং সে তার ইচ্ছামতো ভোটটা দিতে পারছে কি না? না-নৌকা মার্কা অথবা সিনজা মার্কা যে কেউ জোর করে ভোটটা নিতে চাচ্ছে কি না? আমি এইটাকে পছন্দ করি না। আমি চাই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে একটা নির্বাচন হোক।’

ঈদের মতো একটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে—এমন প্রত্যাশা রেখে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি চাই পুরা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের মতো একটা নির্বাচন হোক। আমি চাই সেখানে যদি নৌকা মার্কা জিততে পারে জিতবে। আর যদি নৌকায় মানুষ ভোট না দেয় তাহলে জোর করে ভোট নেওয়া চলবে না।’

এর আগে তিনি নির্বাচন কমিশন থেকে জোটভিত্তিক ভোট করতে চাওয়া দলগুলোর তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এই চিঠিতে তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তালিকা জমা দেওয়ার জন্য। কমিশনের এমন প্রক্রিয়া তাঁর অপছন্দ জানিয়ে কড়া সমালোচনাও করেন এই রাজনীতিক।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সবার আগে দেশ, তারপর ব্যক্তি, তারপর গোষ্ঠী। দেশের পরেই দলগুলোকে মূল্য দেওয়া দরকার। এ জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে ভালোভাবে নিতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন তো আমার বাপ-দাদা না। নির্বাচন কমিশন তো আমার সেবক। ভোটারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। কালকে আবার একটি চিঠি দিয়েছেন, যদি জোট করতে হয়, তাহলে আজকের মধ্যে তার কাছে তালিকা দিতে হবে, কাকে কাকে নিয়ে জোট করবেন। কেন রে বাবা! মানুষ তোমার ভোটই করে না, আর জোট করার জন্য তোমাকে তালিকা দিতে হবে? রাজনৈতিক দল যখন খুশি জোট করবে। যে প্রতীকে খুশি নির্বাচন করবে।’

তবে এই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ হয় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর। তাঁকে জোটের ইঙ্গিতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘এখন এগুলো বলার দরকার নাই।’

তবে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার জোটে ভোট নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বইয়ের বিষয়বস্তু তুলে ধরার সময় তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভোট এবং ভাতের অধিকারের পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন। মৌলিক অধিকার মানে মানবিক অধিকার, সেটি কি দেশের আপামর জনগণ ভোগ করছে? নাকি একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠী বা একটি একটি কোটাভুক্ত সমাজ সেটি ভোগ করছে?’

তৈমুর আরও বলেন, ‘আজকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি উঠেছে। আমি মনে করি, আমাদের দাবি হওয়া উচিত, সংসদ হতে হবে অংশগ্রহণমূলক সংসদ। আপনি সংসদের দিকে তাকিয়ে দেখেন, দেশের সম্পদ যারা লুটে খাচ্ছে, অর্থ পাচার করে যারা বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছে, বেগমপাড়ায় যাদের বাড়িঘর আছে, যারা বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, সংসদের দখল তাদের হাতে।’

বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তৃণমূল বিএনপির ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য দেন তৃণমূল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজসহ আরও কয়েকজন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *