স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা পর্যায়ে একজন ইউএনওকে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে সরকারি প্রটোকল তো আছেই। এসব দায়িত্ব পালন করে চাইলেও যে একজন ইউএনও সাধারণত সহজেই বাড়তি সময় বের করতে পারেন না। কিন্তু এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে নানামুখী ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও আলোচিত হচ্ছেন।
কালিহাতীতে যোগদানের পর থেকেই নিষ্ঠার সহিত প্রশাসনিক দায়িত্বপালনের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাঁর কর্মকাণ্ডগুলো ফলপ্রসূ হতে শুরু করেছে।
শিক্ষা নিয়ে তাঁর ব্যতিক্রমী উদ্যোগসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে– আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন, বিতর্ক প্রতিযোগীতা আয়োজন, স্কুলে স্বল্প সময়ের ক্লাস, দিক-নির্দেশনা প্রদানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলকে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম। এছাড়া যখনই যে স্কুলে যান সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ছোট ছোট প্রতিযোগিতা আয়োজন করে শিক্ষার্থীদেরকে তাৎক্ষণিক পুরস্কার প্রদান করেন।
সম্প্রতি তিনি উপজেলার সাতুটিয়া ও সাকরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের মাঝে কুইজ প্রতিযোগীতা ও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে ‘পরিবেশ বান্ধব স্কুল ব্যাগ’ উপহার দেন। তিনি পর্যায়ক্রমে এক হাজার শিক্ষার্থীকে স্কুল ব্যাগ ও কলম উপহার দিবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া যুক্তিতেই মুক্তি স্লোগানকে প্রতিবাদ্য হিসেবে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে আন্তঃকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। মাধ্যমিক পর্যায়েও এ প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হবে।
প্রোগ্রামটিকে ঘিরে উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক গঠন ঠিক রাখা ও মাদকমুক্ত রাখতে ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন টূর্ণামেন্ট চলমান রয়েছে। তার উদ্যোগেই উপজেলা পরিষদের সামনে উন্মুক্ত ব্যাডমিন্টন কোট তৈরী করা হচ্ছে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য পৌরসভার পাশে উপজেলা পরিষদের খালি জায়গায় মিনি পার্ক নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।
ইউএনও শাহাদাত হুসেইন একের পর এক স্কুলে আকস্মিক পরিদর্শন, স্বল্প সময়ের ক্লাস, দিক-নির্দেশনা প্রদান, প্রতিযোগিতার আয়োজন ও পুরস্কার প্রদানের কারণে এখন প্রতিটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধীর আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে! তারা অপেক্ষা করতে থাকেন কবে, কখন ইউএনও তাদের স্কুলে আসবেন! শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে বেশ আলোচনা ও উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তাছাড়া তাঁর সার্বিক কার্যক্রম, নিয়মিত পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের ফলে শিক্ষকদের মধ্যেও এখন ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার একটি সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সরকারী শামসুল হক কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবীর বলেন, একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা যদি মনে করে তার দাপ্তরিক কাজের বাহিরে একটি উপজেলাকে সমৃদ্ধশালী করবে, তাহলে তার অবস্থান থেকে সম্ভব যদি সদিচ্ছা থাকে। তবে বর্তমান ইউএনও একজন শিক্ষাবান্ধব ব্যাক্তিত্ব। এরমধ্যে তার উদ্যোগ এবং চলমান কাজগুলো প্রশংসা কুড়াচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে তিনি অত্যন্ত গভীর ও আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে এবং সার্বিক শিক্ষার মান উন্নয়নে তাঁর উদ্যোগেগুলো ব্যতিক্রমী। তিনি প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত নিখুঁত ও সুন্দরভাবে করছেন। অচিরেই কালিহাতীবাসী এর সুফল দেখতে পাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন জানান, সকলকে সাথে নিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে ও নানামুখী সৃজনশীল কাজ করতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা আহ্বান করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগীতার আয়োজন,আকস্মিক স্কুল পরিদর্শনসহ সেখানে ছোট ছোট কুইজ প্রতিযোগীতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে তাঁর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সকলের সহযোগিতার মাধ্যমেই আমাদের আগামী প্রজন্মের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।