টাঙ্গাইল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফ সিদ্দিকী ব্যাংকের মুনাফা ও ভাতা ছাড়া আয়ের কোন উৎস নেই !

কালিহাতী টাঙ্গাইল জেলা দেশ জুড়ে রাজনীতি

স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাংকের মুনাফা (সুদ) ও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ছাড়া আয়ের আর কোনো উৎস নেই।

জানাযায়,নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়ের উৎস বেড়েছিল। তার জমির পরিমাণ কমেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে অর্থ থাকলেও বর্তমানে স্ত্রীর নামে কোনো অর্থ নেই। চারটি সংসদীয় নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানাগেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের সংগঠক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে, তৃতীয়বার ২০০৯ সালে ও ২০১৪ সালে চতুর্থবার।

তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পার্ট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে লতিফ সিদ্দিকী দশম মন্ত্রিসভার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে হজ ও তবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। এরপর ইসলামপন্থীদের আন্দোলনের মুখে মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন। পরে জাতীয় সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কৃষিখাত, বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান, ব্যবসা, শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক, চাকুরি বা অন্যান্য কোনো খাতে তার আয় নেই। শুধুমাত্র ব্যাংকে রাখা অর্থের মুনাফা( সুদ) ও বীরমুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে আয় হয়।

সব মিলিয়ে তার বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৪২৪ টাকা। গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধুমাত্র ব্যবসা থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার, দশম নির্বাচনে মন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শকসহ মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা বাৎসরিক ছিল ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা এবং ব্যাংকের মুনাফা(সুদ) পেতেন ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৮ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধুমাত্র শিক্ষকতা ও লেখক সম্মানী দুই লাখ ৫০ হাজার এবং ব্যাংকের মুনাফা আয় ছিল ১৪ হাজার ৬৩৯ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নির্ভরশীল আয় ছিল ১৫ হাজার। এরপর দশম, একাদশ ও এবার দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় নির্ভরশীল আয় দেখানো হয়নি।

সূত্রমতে, বর্তমানে তার নগদ দেখানো হয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৮২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৩৫৯ টাকা। তার একটি টয়োটা জীপ কার, বৈবাহিক সূত্রে উপহার পাওয়া স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। দশম নির্বাচনে তার নগদ ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০টাকা। রূপালী ব্যাংকে ৭ হাজার ৩৫ এবং সাউথইস্ট ব্যাংকে ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ১৯৬ টাকা।

এছাড়া একাদশ নির্বাচনে নগদ টাকা ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৭, রূপালী ব্যাংকে এক হাজার ৫১৫ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকে এক লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৬ টাকা এবং সোনালী ব্যাংকে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬৮ টাকা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।

হলফনামা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তার নামে কালিহাতী উপজেলার ছাতিহাটী গ্রামে ৩৯ শতাংশ পতিত জমি ও গাজীপুরের কাউলাটিয়ায় ১.৮৭ একর জমি রয়েছে। এছাড়া স্বামী ও স্ত্রীর নামে সংসদ সদস্য হিসেবে ৬ কাঠা জমি, কালিহাতীতে এওয়াজমুলে ৭ শতাংশ এবং আত্মীয় হিতৈষীদের দ্বারা নির্মিত একটি ভবন রয়েছে।

দশম নির্বাচনে নিজ নামে টাঙ্গাইলে ৬৬ শতাংশ, গাজীপুরের কাউলাটিয়া ১.৮৭ একর ও ছাতিহাটীতে ৩৯ শতাংশ পতিত জমির থাকার উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়া স্বামী ও স্ত্রীর নামে শিতলপুর ও বনবাড়ীতে ২.২৮ একর, ঢাকায় ৬ কাঠা, কালিহাতীতে এওয়াজমূলে ৭ শতাংশ, ঢাকায় ব্যাংক ঋণে একটি দালান বা ভবন এবং কালিহাতীতে একটি ভবন থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল।

বর্তমান পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, লেখক ও গবেষক হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। একাদশে লেখক, গবেষক ও অন্যান্য। দশমে মন্ত্রী, লেখক, গবেষক ও অন্যান্য। নবমে পেশায় উল্লেখ করেছিলেন, অন্যান্য (রাজনীতিক) পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের মামলাটি উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *