ভারতকে কাঁদিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হেক্সা জয়

খেলা খেলার মাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্টেডিয়াম নিজের, দর্শক নিজের এমন সুবিধা নিয়েই মাঠে নেমেছিল ভারত।

তৃতীয় বারের মতো আশা ছিল আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ ঘরে তুলবে তেরঙ্গা বাহিনী।

কিন্তু তাদের আশায় পানি ঢেলে, কোটি কোটি ভারত সমর্থককে কাঁদিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করেছে ‘পেশাদার’ দল খ্যাত অস্ট্রেলিয়া।

রোববার (১৯ নভেম্বর) ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় আইসিসি মেনস ওয়ার্ল্ড ২০২৩-এর ফাইনাল ম্যাচ।

এই ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে ভারত পুরো ৫০ ওভার খেলে সব উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে জমা করে ২৪০ রান।

অস্ট্রেলিয়া ২৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে করে ২৪১ রান।

অজিদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান আসে ট্রাভিস হেডের ব্যাট থেকে। তিনি ১২০ বলের মোকাবিলায় করেন ১৩৭ রান।

তার ইনিংস সাজানো ছিল ১৫টি চার ও ৪টি ছক্কায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন মারনুস লাবুসচেঞ্চ।

তিনি ১১০ বলে করেন ৫৮ রান। তার ইনিংসে চারের মার ছিল ৪টি।

ম্যাচের ৬ ওভার শেষে যখন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৪৭, তখন থেকে জুটি বাঁধেন হেড ও লাবুসচেঞ্জ।

দু’জনে অবিচ্ছিন্ন ম্যাচে ৪২ দশমিক ৪ বল পর্যন্ত। সিরাজের এই ওভারের ৫ নম্বর বলে শুভমন গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান হেড।

হেডের পর মাঠে নেমে ৪৩তম ওভারে শেষ বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করল অজিরা। এর আগে ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছিল অস্ট্রেলিয়া।

অন্যদিকে, ভারতের ঝুলিতে রয়েছে দুটি বিশ্বকাপ ট্রফি। তারা ১৯৮৩ ও ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয় করে।

ভারতের জয় দেখতেই এদিন মাঠে ভিড় করেছিলেন হাজার হাজার দর্শক। তাদের ভিড়ে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক খুব একটা চোখেই পড়েনি।

কারণ শত হলেও নিজের দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছেন রোহিত-বিরাটরা।

মাঠে ছিলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বলিউড বাদশা শাহরুখ খানসহ বহু নামিদানি ব্যক্তি ও সেলিব্রেটি।

কিন্তু সবার চোখের সামনেই ধীরে ধীরে মুছে যায় ভারতের জয়ের আলো।

বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য খুব বড় ছিল না, ২৪১ রান।

তবে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল কামিন্সের দল। দলীয় ১৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

৩ বলে ৭ করে মোহাম্মদ শামির বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ হন ডেভিড ওয়ার্নার।

১৫ বলে ১৫ করে মিচেল মার্শ হন জসপ্রিত বুমরাহর শিকার। উইকেটরক্ষক নেন ক্যাচ।

এরপর মাত্র ৪ রান করে স্টিভেন স্মিথও বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হলে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।

যদিও স্মিথ আউট ছিলেন না। বল বাইরে পিচ করেছিল। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলে আর রিভিউ নেননি স্মিথ।

দলের বিপদের সময়ে হাল ধরে ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুসচেঞ্জ। তাদের জুটি ২১৫ বলে ১৯২ রান করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়ার হাতে।

ফাইনালে ভারত হারতে পারে, এমন আভাস অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল টস হেরে করা ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়টাতেই।

প্রতাপশালী, দাপুটে ব্যাটিং লাইনআপ ফিকে হয়ে আসে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স আর জশ হ্যাজেলউডের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে।

শুরুটা হয়েছিল শুভমন গিলকে দিয়ে। স্টার্ককে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে আসেন মিড অনে দাঁড়ানো অ্যাডাম জাম্পার হাতে। ড্রেসিংরুমে ফিরে যান তিনি ৭ বলে ৪ রান করে।

গিলকে হারানোর ক্ষত পরে আরো বাড়ে রোহিত শর্মাও পাওয়ার প্লের ভেতরই ফিরে যাওয়ার পর।

ম্যাক্সওয়েলকে তুলে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন অনেকটুকু ওপরে, কাভার থেকে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ট্রাভিস হেড। তখনও অবশ্য ভারতের রানটা ঠিকঠাকই ছিল, ১০ ওভারে তারা করেছিল ৮০।

শ্রেয়াস আয়ার আউট হওয়ার পর ভারতের ডাগ-আউটে বসে থাকা রাহুল দ্রাবিড়ের স্মৃতিতে সম্ভবত বারবার ২০০৩ নাড়া দিয়ে গেছে।

সেবার তিনি ছিলেন ক্রিকেটার, বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে।

এবার তিনি কোচ, এখনো কি তেমন হবে? ৮১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ওই দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করা খুব অস্বাভাবিকও নয়।

কিন্তু এরপরই তাকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। এ দুজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটির ফাঁকে বিরাট কোহলি তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা এই ব্যাটারের রান প্রায় ছিল ৮০০ হওয়ার পথে, বাকি আর কারো নেই ৬০০-ও।

তবে কোহলিকে থামতে হয় অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে।

প্যাট কামিন্স আগের দিন নিজের চাওয়া জানিয়েছিলেন, ‘চুপ’ করিয়ে দিতে চান এক লাখ ত্রিশ হাজার মানুষকে।

কোহলিকে আউট করার পর বাস্তব অনুভূতিটাও পেয়ে যান তিনি। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে আউট হয়ে যান কোহলি, রাহুলের সঙ্গে তার ৬৭ রানের জুটি ভাঙে।

কোহলি আউট হওয়ার পর দায়িত্বটা পড়ে লোকেশ রাহুলের ওপর। সেটি তিনি পালনও করছিলেন ঠিকঠাক। মাঝে তার সঙ্গী হয়ে ফিরে যান রবীন্দ্র জাদেজা।

এরপর রাহুলও এমন এক বলে ফেরেন, যেখানে তার আদতে করার ছিল না কিছুই।

স্টার্কের ওই বলে উইকেটরক্ষক ইংলিশের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ১০৭ বল খেলে স্রেফ একটি বাউন্ডারি হাঁকানো রাহুল করেন ৬৬ রান।

তার বিদায়ের পর সব আশাই ছিল সূর্যকুমার যাদবকে ঘিরে।

কিন্তু তাকে স্লো বল করে বিপাকে ফেলে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ২৮ বলে ১৮ রান করে হ্যাজেলউডের শিকার হন তিনি।

শেষ ওভারে এসে একটি চার হাঁকান মোহাম্মদ সিরাজ। তাতে দলের রানও যায় ২৪০-এর ঘরে।

স্টার্ক ১০ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন, দুই উইকেট করে পান হ্যাজেলউড ও কামিন্স। প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ ট্রাভিস হেড।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *