ট্রফির আশা জাগিয়ে রাখল বাংলাদেশ

খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার আশা অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছে বাংলাদেশের। এখন টাইগারদের চোখ পয়েন্ট টেবিলে ৭ নম্বর স্থানটির দিকে।

কারণ সেটি নিশ্চিত করা গেলে অন্তত ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের।

এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল সাকিব বাহিনী এবং শেষ পর্যন্ত তারা শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে তাদের স্বপ্নের প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখতে পেরেছে।

তবে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয় লাল-সবুজদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা। কারণ বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা উভয়েই ৮টি করে ম্যাচ খেলেছে।

তারা উভয়েই জয় পেয়েছে দুটি করে। সুতরাং তাদের উভয়েরই পয়েন্ট ৪। এমন পরিস্থিতিতে নেট রানরেটে বাংলাদেশ আছে সপ্তম স্থানে আর শ্রীলঙ্কা অষ্টমে। বাংলাদেশের নেট রানরেট -১.১৪।

অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার -১.১৬। সুতরাং দুই দলেরই শেষ ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে স্থান পাওয়ার বিষয়টি।

সোমবার (৬ নভেম্বর) ভারতের দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে ৪৯ দশমিক ৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রান সংগ্রহ করে লঙ্কানরা।

বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮০ রান। টাইগাররা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৪১ দশমিক ১ ওভারে। ৭ উইকেটে তারা করে ২৮২ রান।

এ দিন ব্যাটিংয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৬৫ বলে খেলেছেন ৮২ রানের ইনিংস। বাজে ছন্দ দূর করে শান্ত ১০১ বলে করেন ৯০ রান।

এই দুজনের ১৬৯ রানের জুটির পর টানা কয়েকটি উইকেট পড়লেও মুখ থুবড়ে পড়েনি বাংলাদেশ।

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে লফটেড শটে দুই চারে ইনিংস শুরু করে আরো একবার বাজে শটে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। দিলশান মাধুশঙ্কার বলে ৫ বলে ৯ রানে থেমে যান তিনি।

লিটন দাস একটা পুল শট মারতে গিয়ে শুরুতেই পেশিতে টান পান। উঠে দাঁড়িয়ে পরে কাসুন রাজিতাকে দুই ছক্কায় উড়ান। স্ট্রেট একটা ছক্কা মারতে গিয়ে আরও একবার টান পড়ে। কিছুক্ষণ শুশ্রূষা নেয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেননি।

মাধুশঙ্কার দারুণ এক ইয়র্কারে এলবিডব্লিউতে কাবু লিটন ফেরেন ২৩ রান করে।

সাকিব ক্রিজে আসতেই তুমুল আওয়াজ উঠে গ্যালারিতে। কিছু তার পক্ষে, বেশ কিছুই বিপক্ষে।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদেরও তাকে কিছু একটা বলতে দেখা যায়। সবচেয়ে উত্তেজনা তৈরি হয় যখন ম্যাথিউস বল করতে আসেন।

ম্যাথিউসের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে একবার পরাস্ত হওয়ার পর ক্যাচ দিয়ে দেন শর্ট কাভারে। ৭ রানে থাকা সাকিবের ক্যাচ রাখতে পারেননি আসালাঙ্কা।

জীবন পেয়ে বাজে ছন্দে থাকা সাকিব আর ভুল করেননি। শান্তর সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। দারুণ খেলে দুজনেই ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে থাকেন বাংলাদেশের পক্ষে।

ক্রিজে দুই বাঁহাতি থাকার পরও অফ স্পিনারদের আক্রমণে আনতে পারছিলেন না লঙ্কান অধিনায়ক। কারণ বোলাররা বলই গ্রিপ করতে ভুগছিলেন।

এমনকি পেসারদের বলও হাত ফসকে বের হচ্ছিল। সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি সাকিব-শান্ত। দু-জনেই বেছে নেন আক্রমণের পথ। কোনো বোলারকেই থিতু হতে দেননি এই দুজনে।

মাঝের ওভারে ভেজা বল বদলানো নিয়ে আবার লম্বা সময় বন্ধ থাকে খেলা। সিদ্ধান্ত নিয়ে অখুশি লঙ্কানরা শরীরী ভাষায় বারবার জানালো হতাশা।

পরে আলগা বোলিংয়ে সেই হতাশা ক্রমে বাড়তে থাকে তাদের। এই জুটি ১০০ ছাড়িয়ে পার হয়ে যায় ১৫০-ও। তখন ম্যাচ ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশের দিকে।

ম্যাচ হাতের মুঠোতে থাকা অবস্থায় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ম্যাথিউস তার নতুন স্পেলে এসে স্লোয়ার বলে কাবু করেন সাকিবকে।

বাংলাদেশ অধিনায়ক আউট হন ৬৬ বলে ৮২ করে। তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙে ১৪৯ বলে ১৬৯ রান তুলে। সাকিবকে আউট করে হাতে ঘড়ির ইশারা দেন ম্যাথিউস।

খানিক পর শান্তকেও ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড করেন ম্যাথিউস। পরপর দুই উইকেট ফেললেও জয় তখন একদম নাগালে বাংলাদেশের। আরো নাটকীয়তা তখনো বাকি। পুরো বিশ্বকাপে নির্ভরতা জুগিয়ে আসা মাহমুদউল্লাহ বোল্ড হয়ে গেলে হঠাৎ যেন ভাঙনের কাঁপন।

এরপর মিরাজও দিলেন ক্যাচ তুলে। তবে যত যাই হোক ম্যাচ হাতছাড়া করতে দেনটি তাওহীদ হৃদয় ও তানজিম হাসান সাকিব। তারা দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।

স্কোর :

শ্রীলঙ্কা : (২৭৯ অলআউট। ওভার ৪৯.৩) : নিশাঙ্কা ৪১, পেরেরা ৪, কুশল মেন্ডিস ১৯, সামারবিরা ৪১, আসালাঙ্কা ১০৮, ম্যাথিউস ০, ধনঞ্জয় ৩৪, থেকশানা ২১, চামিরা ৪, রাজিথা ০, মাধুশাঙ্কা ০*; অতিরিক্ত ৭।

শরিফুল ৯.৩-০-৫১-২, তাসকিন ১০-১-৩৯-০, তানজিম ১০-০-৮০-৩, সাকিব ১০-০-৫৭-২, মিরাজ ১০-০-৪৯-১।

বাংলাদেশ : (২৮২/৭। ওভার ৪১.১) : তানজিদ ৯, লিটন ২৩, শান্ত ৯০, সাকিব ৮২, মাহমুদউল্লাহ ২২, মুশফিকুর ১০, হৃদয় ১৫*, মিরাজ ৩, তানজিম ৫*; অতিরিক্ত ২৩।

মাধুশাঙ্কা ১০-১-৬৯-৩, থেকশানা ৯-০-৪৪-২, রাজিথা ৪-০-৪৭-২, চামিরা ৮-০-৫৪-০, ম্যাথিউস ৭.১-১-৩৫-২, ধনঞ্জয় ৩-০-২০-০।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *