স্টাফ রিপোর্টার :
বছর ঘুরে আবারো শুরু হতে যাচ্ছে ‘কোক স্টুডিও বাংলা কনসার্ট’। আগামী ১০ নভেম্বর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে হবে ‘কোক স্টুডিও বাংলা লাইভ কনসাটটির্’।
জনপ্রিয় সব গানের পসরা নিয়ে এবার ত্রিশ জনের বেশি শিল্পী ফের আসছেন স্টুডিওর বাইরে, খোলা কনসার্টে।
‘কোক স্টুডিও বাংলায়’ দেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা যেমন এসেছেন, তেমনি পরিচিতির আলোর বাইরে থাকা শিল্পীদেরও নতুন করে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছে গানের এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
তেমনি একজন কানিজ খন্দকার মিতু। কোক স্টুডিওতে লালনের বিখ্যাত গান ‘সব লোকে কয়’ উঠে এসেছে তরুণ এই শিল্পীর কন্ঠে। এরইধ্যে গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলেছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গ্রামের মেয়ে মিতু। স্বপ্ন দেখতেন গান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। তার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপটি শুরু হয় সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় অংশ নিয়ে।
২০১১ আয়োজিত একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আয়োজনে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি।
মিতুর এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অধ্যবসায়। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এইচএসসির পর পড়াশোনা শুরু করেন সংগীতের ওপর।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগ থেকে স্নাতক- স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মিতু। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল করছেন তিনি।
কোক স্টুডিওতে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে মিতু জানান, এই প্ল্যাটফর্মটিতে যারা কাজ করেন তারা আসলেই অনেক বড় মাপের গুনীমানুষ।
এই প্লাটফর্মে গান গাওয়ার বিষয়ে প্রথম থেকেই এখানকার সিনিয়ররা পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন। গানের যে কোনো বিষয় তারা বুঝিয়ে দিতেন।
এ দিকে ভবিষৎতে ফোক গানের পাশাপাশি আধুনিক গান করার ইচ্ছে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংগীত নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে।
যদি সুযোগ আসে কখনো এবং এমন কোনো গান যদি মনে হয় আমার কন্ঠে করা যাবে তাহলে অবশ্যই করবো।
মিতু জানান, আমার ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে ভর্তি হওয়ার। আর আমার গানের ওস্তাদ গোলাম রাব্বানী রতন (গুরু বাবা) তিনিও চাইতেন আমি যেন কোনো পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
সেই দিক থেকে আমার বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংগীতের জন্য অনেকটা এগিয়ে ও পরিচিত একটি নামও বটে।
এ ছাড়া জাতীয় কবির নাম যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জড়িয়ে আছে, সেখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দেবে না, তা কী করে হয়।
আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য (স্যার) সৌমিত্র শেখর নিজেও একজন গুনী মানুষ।
উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই আমাদের ভিসি স্যার পরিচিত মুখ। সভা-সেমিনার থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টক শো কিংবা রিয়েলিটি শো নানা ক্ষেত্রে তঁকে পাওয়া যাবে।
তা ছাড়া আমাদের সংগীত বিভাগের ডিন ড. মোশাররফ শবনম, বিভাগীয় প্রধান ড. জাহিদুল কবির এবং ড. আরিফুর রহমান স্যাররা সব সময় আমাকে বিভিন্ন ভাবে পড়াশোনা আর গান নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকেন।
স্যারদের সহযোগীতা আছে বলেই আমি গান নিয়ে আজকের এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি।
এ ছাড়া স্যারদের সহযোগীতায় গানের পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের অনেক বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গান নিয়েও গবেষণার কাজ করছি। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ‘ধূয়া গান’।
ইতোমধ্যে ‘ঘাটো’ গানের উপর আমার নিজের করা একটি গবেষণা ‘মানববিদ্যা’ নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আরেকটি গবেষণার কাজ এখনো চলমান।
আশা করছি খুব শিগগিরই সেটিও প্রকাশিত হবে অন্য একটি জার্নালে।
গান নিয়ে নিজের ভবিৎষত পরিকল্পনা বিষয়ে বলতে গিয়ে মিতু বলেন, ‘গানটাকে আমি আমার অন্তরে লালন করি। তাই বর্তমান ও ভবিষৎ সব সময় আমি গানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।
আমি যেহেতু সংগীতের উপর পড়াশুনা করছি, তাই আমি চাই সবসময় আমাদের দেশের হারিয়ে যাওয়া গানগুলোকে নিয়ে কাজ করতে।
পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য বিশেষ করে সংগীত প্রিয়দের জন্য নতুন কিছু উপহার দিতে।
বর্তমানে ‘বাংলা বাউল স্টুডিও’ সিজন-১ নামের একটি অনুষ্ঠানের জন্য গান করেছি।
আসছে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানটি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে।