টাঙ্গাইল সদরে ৮ ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ
মাসুদ আব্দুল্লাহ ॥
চতুর্থ ধাপে আগামী (২৬ ডিসেম্বর) ইউপি নির্বাচনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। এ কারণে হামলা পাল্টা-হামলার ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিনে হামলায় আহত হয়েছেন হুগড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী তুহিনের অন্তত ৮ কর্মী। নৌকার প্রার্থী তোফার কর্মীরা শাহিন ম-ল ও সুজনকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। একজনের হাত ও পা ভেঙে গেছে। আহত দু’জনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য ৬ জনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর-ই আলম তুহিন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ পাহারায় থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং আমার কর্মীদের ওপর হামলা করছেন। এলাকায় তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ইউনিয়নবাসীকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখতে চান। যাতে নৌকার বিপক্ষে কেউ ভোট না দেন। এসব ঘটনায় তিনি নির্বাচন অফিস ও থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানান।
এদিকে নৌকার প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা সোববার (২০ ডিসেম্বর) পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, গত ১০ বছরে ইউনিয়নের প্রত্যেক মানুষের কাছে সব সেবা পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ আওয়ামী লীগের উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবে। তুহিনের কর্মী-সমর্থকরাই আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড দাইন্যা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান হোসেন মিন্টু ও ঘারিন্দা ইউনিয়নে ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাব অন্তুকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়। এ দুই মনোনয়ন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তাদের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বাণিজ্যের অভিযোগ আনেন। পরে প্রার্থী পরিবর্তন করে দাইন্যা ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন ও ঘারিন্দা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এখানে আওয়ামী লীগের বিশাল একটি গ্রুপ নৌকাকে ঠেকানোর চেষ্টায় তৎপর রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দলে পদ পদবি না থাকলেও নৌকা ঠেকানোর জন্য অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ১০ বছর ধরে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রয়েছি। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের পর দল বিষয়টি উপলব্ধি করবে।
এদিকে, দাইন্যা ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন। হুগড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা, নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন নুর ই আলম তুহিন। ঘারিন্দা ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন সরকার। বাঘিল ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম মতিয়ার রহমান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আবু জাফর, বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ। করটিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান চৌধুরী মজনু। সেখানে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সৈয়দ জাদিদুল হক। পোড়াবাড়ি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুজ্জামান রশিদ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জাহীদ হোসেন জাহাঙ্গীর, মিজানুর রহমান, শাহাদত হোসেন, হালিম মিয়া ও শরিফুর রহমান। গালা ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান রাজ কুমার। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। মগড়া ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম নৌকা পেয়েছেন। ওই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম বুলবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদক কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোতালিব হোসেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান টিনিউজকে বলেন, যারা বিরোধিতা করছে, তারা আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্র অংশ। ইতোমধ্যে দু’জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। যারা সহযোগিতা করছেন, তাদেরও দল থেকে বহিস্কার করা হবে।
Comments are closed.