টাঙ্গাইল পৌর শহর ভাঙ্গাচুড়া ॥ বিক্ষুব্ধ জনগন

0 265

রঞ্জিত রাজ ॥
দেশের প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রায় সবকটি রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে মাটির রাস্তায় পরিনত হয়েছে। এতে করে জনদুর্ভোগ চরমে পৌছেছে।  সেই সাথে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে পৌরবাসী। দেশের প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার এই অবস্থা দেখে মানুষ চরমভাবে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। রাজধানী ঢাকার কাছে টাঙ্গাইল জেলা শহরের এই করুণ অবস্থা কেন, এমন উত্তর নেই যেন কারও কাছে। বৃষ্টির সময় শুরু হয়ে গেছে। এখন জনগনের ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে, এতে কোন ভুল নেই। তবে পৌরবাসীও যেন কেন নিশ্চুপ, তারা নাগরিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সোচ্চার নয়।
বিক্ষুব্ধ পৌরবাসী টিনিউজকে জানান, এখন কারও উপরই আস্থা নেই। সবাই যেন একই বোতলের বাসিন্দা। শুধু বোতলের লেবেল বদলে যায়। উন্নয়নমূলক কাজ চলছে তো চলছেই। শেষ হওয়ার যেন লঙ্খন দেখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না। পৌরবাসীকে জিম্মি করে অসুস্থ পরিবেশে রাখা হচ্ছে। নাগরিক সুবিধার কোন নামই নেই। অন্য জেলা থেকে আসা মানুষ আমাদের এই করুণ অবস্থা দেখে লজ্জা দেয়।
জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বেবিস্ট্যান্ড, কলেজ পাড়া, বটতলা, থানাপাড়া, সাহাপাড়া, আদালত পাড়া, আকুরটাকুর পাড়াসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তা ও ড্রেন নির্মান ও সংস্কারের কাজ চলছে। বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে নতুন রাস্তার সাথে নতুন করে করা হচ্ছে আরসিসি ড্রেন, ফুটপাত ও স্ট্রিট লাইট স্থাপন। মূল রাস্তার সাথে করা হচ্ছে তিনটি লিংক রোড। এই রাস্তাগুলো নির্মাণ করার জন্য পৌরসভা রাস্তার জায়গা দখলমুক্ত করার কাজও করেছে। এতে ভাঙা পড়ছে অনেক বাসা-বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও দোকানপাট। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্দেশ পাওয়ার পরও অনেকে তাদের বাসাবাড়ী, দোকানপাট ভাঙছে না। এতে করে কাজে বিলম্ব দেখা দিয়েছে। শহরের কলেজপাড়া মোড় থেকে পশ্চিমপাশ থেকে গৌর ঘোষের মোড় পর্যন্ত অংশ এখনও ভাঙা হয়নি। তারা পৌরসভার উন্নয়ন কাজ ঠেকাতে পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা পর্যন্ত করেছে। সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা ও পৌরসভার নির্দেশনা মানছে না কলেজপাড়া পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের বারবার সর্তক করে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ রোড থেকে বটতলা, তালতলার ভিতর দিয়ে এই রাস্তাটি বেবিস্ট্যান্ডে মূল রাস্তার সাথে সংযোগ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত রয়েছে। রিকশা, ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল তো দূরের কথা মানুষের পায়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর এই রাস্তায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বৃষ্টির পানি শুকাতে চাইনা এই রাস্তা থেকে। হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনের রাস্তায় অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে থাকতো। পৌর শহরের রাস্তাগুলো দেখে আর বোঝার উপায় নেই- এটি পৌরসভার রাস্তা নাকি খাল। পিচ উঠে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে থাকে এই রাস্তাগুলো।
খানাখন্দকে ভরা এই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে। যেন হোমপতি ওষুধের মতো। কাজের গতি কমের কারণে আবার বৃষ্টির সময় চলে এসেছে। এখন কাজ চলমান রাখা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। মূলরাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাতসহ ত্রিশ ফুট রাস্তার কাজ করা হবে। বেবিস্ট্র্যান্ড থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ রোড পর্যন্ত প্রায় ৩,৪০০ মিটার এই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ পেয়েছে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জি কে এন্টারপ্রাইজ। ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে এই রাস্তাটি। এমজিএসপি’র একটি প্রকল্পের কাজ এটি। রাস্তার দুইপাশে ড্রেন ও পায়ে হাটার ব্যবস্থা করা হবে। পাশের ড্রেনটির পানি দুটি পয়েন্ট দিয়ে লৌহজং নদীতে গিয়ে পড়বে।
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ রোড থেকে বেবিস্ট্যান্ড রোডে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই নিজ উদ্যোগে বাসা-বাড়ির সীমান প্রাচীর ও দোকানপাট ভেঙে নিচ্ছেন। বেশির ভাগ জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ বাসা-বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও দোকানপাট ভেঙে দিচ্ছে। এ বিষয়ে শহরের সচেতন নাগরিকরা টিনিউজকে জানান, পৌরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কারণ পৌরসভার জায়গা অবৈধভাবে দখল করে যারা দীর্ঘদিন ঘরে বাড়িঘর, সীমানা ওয়াল, দোকানপাট তৈরি করেছেন। পৌরসভা দেরিতে হলেও তা উদ্ধার করছে। শহরের রাস্তা প্রশস্ত এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল হোক এটা সকলেই চায়। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তারা যেন অবৈধ উদ্ধার অভিযান বন্ধ না করেন। এই শহরকে বাঁচাতে হবে এবং আগামীর প্রজন্মের চিন্তা করতে হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ যেন শুধু মার্কেট বানিজ্য না করে সেদিকটিও নজর দিতে হবে।
শহরের বাসিন্দারা টিনিউজকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনেক কষ্ট করে এই রাস্তায় চলাচল করছি। গত কয়েক বছর ধরে এই রাস্তাটি কোন সংস্কার বা উন্নয়নের কোন কাজে হাত দেইনি পৌরসভা। রিকশা, ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইক কিছুই চলে না এই রাস্তাগুলো দিয়ে। আমাদের এই রাস্তা ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তাও নেই। আমরা শুনে খুশি হয়েছি এই রাস্তাটি পুনরায় নির্মাণ করা হবে। কিন্তু কাজে কোন গতি নেই। এভাবে কাজ করলে বৃষ্টির সময়ে সবাইকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। পৌরবাসী আরও বলেন, কাজ যেন সঠিক সময়ে দ্রুত ও সুন্দরভাবে করা হয়।
কলেজ পাড়ার বাসিন্দা আজিজ মিয়া টিনিউজকে বলেন, বর্তমানে এই রাস্তাটির করুণ দশা। এই রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হয়। এছাড়া টাঙ্গাইল পৌর এলাকার অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচুড়া।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র তানভির হাসান ফেরদৌস টিনিউজকে বলেন, ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন, ফুটপাত ও স্ট্রিট লাইটসহ ৩০ ফুট প্রস্থের এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হবে। অনেকদিন ধরে এই রাস্তাটি অচল অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার কাজটি যাতে করে সুন্দর ও দ্রুত সময়ে হয় তার দিকে খেয়াল রাখবো।
পৌরসভার রাস্তা উদ্ধারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি টিনিউজকে বলেন, আমরা সবার সাথে কথা বলেই কাজ করছি। এই রাস্তা নির্মাণ করার সময় যদি কারও ব্যক্তিগত জায়গা প্রয়োজন পড়ে তবে আমরা তার সাথে আলোচনা করেই কাজ ধরবো। আমার জানা মতে এখন পর্যন্ত কারও ঘর বা বড় দালান ভাঙা পড়েনি। পৌরসভার জায়গায় বসতঘর বা বড় দালান ভাঙা পড়লে তার জন্য কোন ক্ষতি পূরণ দেয়া হবে না। ব্যক্তি জায়গায় পড়লে অবশ্যই আমরা এ দিকটি বিবেচনা করবো। জানা গেছে, এই রাস্তায় অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে, সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হবে।
পৌর কর্তৃপক্ষ টিনিউজকে জানান, উন্নয়ন কাজের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস বিভাগগুলো আমাদের সঠিকভাবে সহযোগীতা করছে না। প্রশাসনকে বলা হয়েছে বটতলা বাজার স্থানান্তর এবং বিন্দুবাসিনী স্কুলের দেয়াল ভাঙতে। কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছি না। এছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিভাগকে বলা হয়েছে রাস্তার উপর বিদ্যুৎ খুঁটি ও গ্যাসের রাইজার সরাতে। কিন্তু তারা কাজ করছে না। এসব কারণে উন্নয়ন কাজে ধীরগতি হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ