টাঙ্গাইল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা, অনৈক্য ও বিশৃংখলা বিরাজ করছে
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে গোলক ধাধায় পড়েছেন পার্টির নেতাকর্মীরা। হতাশা, অনৈক্য ও বিশৃংখলা বিরাজ করছে তৃনমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে। জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি প্রস্তুতি কমিটি দেওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কোন পথে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের জাতীয় পার্টি।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত (৭ ফেব্রুয়ারী) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (এমপি) ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্ন (এমপি) ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দেন। এতে আহবায়ক আব্দুস সালাম চাকলাদার ও সদস্য সচিব মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে করা হয়। অপরদিকে গত বছরের (১৮ নভেম্বর) ইঞ্জিঃ লিয়াকত আলীকে আহবায়ক ও আজিজুর রহমান তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক গোলাম মসীহ। যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম নুরু এবং জাতীয় পার্টির বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ (কাজী মামুন) এর সুপারিশক্রমে ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এর সম্মতিতে তিনি টাঙ্গাইল জেলার জাতীয় পার্টির এই কমিটির অনুমোদন দেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ইঞ্জিঃ লিয়াকত আলী টিনিউজকে বলেন, জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম নুরু এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা’র মূখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ (কাজী মামুন) এর সুপারিশে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের অনুমতিক্রমে পার্টির আহবায়ক গোলাম মসীহ গত বছরের (১৮ নভেম্বর) টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির অনুমতি দিয়েছেন। সেই কমিটির মাধ্যমে জেলাসহ বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পার্টির কার্যক্রম নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তিনি টিনিউজকে আরো বলেন, আমি মনে করি টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টিতে কোন প্রকার গ্রুপিং নাই। কারণ, জেলার সকল নেতাকর্মীরা আমাকে পার্টির কার্যক্রম গোছানোর বিষয়ে সহযোগিতা করছেন। ইতোমধ্যে কালিহাতী উপজেলার আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উক্ত আহবায়ক কমিটি পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। যার ফলে কালিহাতী উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন এর মধ্যে ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকী একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের কমিটি সম্পন্ন করা হবে। এছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে। ইঞ্জিঃ লিয়াকত আলী টিনিউজকে আরও বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোদী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ মিলে মিশে যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমি টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টিকে আরো শক্তিশালী করবো।
আজিজুর রহমান, রমজান, রহিম বাদশা ও ফজলু সিকদার টিনিউজকে বলেন, গত বছরের (১৮ নভেম্বর) যে কমিটি দিয়েছে সেই কমিটি থাকা অবস্থায় নতুন করে কমিটি দেওয়াতে অনৈক্য ও বিশৃংখলার সৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মোজাম্মেল হক টিনিউজকে বলেন, তাদের কমিটি বৈধ না। তিনি আরো বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন হতাশা নাই। বরং তারা নতুন প্রস্তুতি কমিটি পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।
কমিটির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফকির শাহআলম টিনিউজকে বলেন, গত (৭ ফেব্রুয়ারীতে) যে কমিটি হয়েছে সেই কমিটির ব্যাপারে টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কিছুই জানে না। তাছাড়া যাদেরকে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, তাদের কোন কার্যক্রম জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে দৃশ্যমান নয়। এর আগে তারা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেমসহ আরো অনেককেই হেনস্থা করেছে।
টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পাটির আহবায়ক এডভোকেট আব্দুস সালাম চাকলাদার টিনিউজকে বলেন, টাঙ্গাইল জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরের সঙ্গে আমরা যারা আছি, সেটাই মুল জাতীয় পার্টি বলে আমি মনে করি। তাই টাঙ্গাইলে রওশন এরশাদের গ্রুপ যে কমিটি দিয়েছে সেটাকে আমলে নিচ্ছি না। এছাড়াও আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম টিনিউজকে বলেন, গত (৭ ফেব্রুয়ারীতে) যে কমিটি দিয়েছে সে বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (এমপি) এবং মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নকে (এমপি) মৌখিকভাবে বলে দিয়েছেন টাঙ্গাইলের প্রস্তুতি কমিটির কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখার জন্য।