গোপালপুরে ধর্ষণচেষ্টার আসামির জামিনে ব্যান্ডপার্টি দিয়ে ভুক্তভোগীর উঠানে নাচ-গান!

215

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে (১০)। স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে ফুটফুটে মেয়েটি। এবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পেয়েছে। সেই শিশুটি ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছে।




এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ধর্ষণচেষ্টা মামলার একমাত্র আসামি আলেপ শেক (৬০) আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। মুক্তি পেয়েই গলায় মালা ঝুলিয়ে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেছেন। এতেই শেষ নয়। ওই শিশুর মা এবং মামলার বাদীর বাড়ির আঙিনায় গিয়ে আসামি ও তার লোকজন নেচে-গেয়ে আনন্দ করে। এমন ঘৃণিত ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আসামির কঠিন শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।




গোপালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির ওই শিশুছাত্রীকে গত (২৪ জুলাই) দুপুরে কাঁঠাল খাওয়ার লোভ দেখিয়ে নির্জন বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান গ্রামের মুদি দোকানি আলেপ শেক। কান্নাকাটির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আলেপ শেক পালিয়ে যান। ওই দিন বিকেলে থানায় মামলা হলে পুলিশ আলেপ শেককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।




মামলার বাদী এবং ভুক্তভোগীর মা শনিবার (২৬ আগস্ট) থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানান, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত ৯টায় আলেপ শেক গলায় মালা পরা অবস্থায় ব্যান্ডপার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেন। ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে তার আত্মীয়সহ বেশকয়েকজন উৎসুক মানুষ যোগ দেন। তারা নেচে-গেয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেন। একপর্যায়ে আলেপ শেক দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে নাচানাচি শুরু করেন। পাশাপশি গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দেন। এ অবস্থায় দিনমজুর বাবা-মা অসহায় শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশের সহযোগিতা চাচ্ছেন।




হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলীম হোসেন টিনিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাত ১০টায় ব্যান্ডপার্টি এবং কিছু মানুষের কোলাহলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। শিশুটির পরিবার খুবই নিরীহ। তারা এখন আতঙ্কে আছে। আসামি খারাপ প্রকৃতির লোক। একই গ্রামের বাসিন্দা সাহার আলী, ইব্রাহীম খলিল ও মকবুল হোসেন টিনিউজকে জানান, শিশু নির্যাতনের মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে গলায় মালা জড়িয়ে ব্যান্ডপার্টির বাদ্যের তালে নেচে-গেয়ে এমনভাবে আনন্দ করাটা কোনো সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া বেগম টিনিউজকে বলেন, শিশুটি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ ভালো। এমন ঘটনায় শিশুটি চুপসে গেছে। কয়েক দিন সে স্কুলে আসেনি। ব্যান্ডপার্টির ঘটনায় ওই শিশু আর তার অসহায় পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এর কঠিন বিচার চাই। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার সাহস কেউ না পায়।




ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিক মিয়া টিনিউজকে বলেন, উড়িয়াবাড়ী গ্রামের আলেপ শেক বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। রবিউল হাসান রতন নামে একজন আমাদের ব্যান্ড পার্টিকে তিন হাজার চারশ’ টাকায় ভাড়া করেন। রাত ৯টায় আমরা ওই গ্রামে যাই। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা গ্রাম ঘুরে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে সবাইকে আনন্দ দিই। জেলখানা থেকে আসামি বের হলে যে বাজনা বাজায়, এই কাজ প্রথম করলাম।




হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টিনিউজকে বলেন, ধর্ষণচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কোনো আসামি এভাবে আনন্দ উৎসব করে বলে আমার জানা নেই। এতে ভুক্তভোগী শিশুটি আরো নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্মানহানির অবস্থায় আছে। আমরা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুয়ারা ময়না টিনিউজকে জানান, তালিকাভুক্ত শিশু ফুটবলার ও ক্রিকেটার এ বাচ্চাটিকে মানসিকভাবে শকড হওয়ায় আমরা তাকে হয়তো হারাতে বসেছি। এ ঘটনার তদন্ত এবং শাস্তি দাবি করেন তিনি। শিশুটির মামা টিনিউজকে বলেন, আমার বোনটি অসহায়। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। জামিনে বের হয়ে যে কাণ্ড করেছে এটা কেউ করে না। আমরা যথাযথ বিচার চাই।




প্রধান আসামি আলেপ শেকের ছেলে জীবন মিয়া টিনিউজকে বলেন, আমাদের সঙ্গে তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে বিরোধ। মামলাটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। একমাস জেল খাটার পর রবিউল হাসান রতনের উদ্যোগে ব্যান্ডপার্টি বাজানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হেমনগর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই বশির আহমেদ টিনিউজকে বলেন, জামিন পাওয়ার পর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গ্রামে আনন্দ উৎসব করার ঘটনা সত্য। ধর্ষণচেষ্টায় দায়ের হওয়া মামলার সত্যতা মিলেছে। দ্রুতই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।




গোপালপুর থানার (ওসি) মোশারফ হোসেন টিনিউজকে বলেন, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আসামি দলবল নিয়ে বাদী ও ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করবে।