আমলকী মাত্র দুটি খেলেই দূর হবে ভিটামিন সি’র অভাব
হাসান সিকাদর ॥
এখন ফ্রিজ খুললেই মালটা। কমলা। বিশেষ করে করোনাকালে এ দুই ফল দিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করে রাখছেন অনেকে। কারণ আর কিছু নয়, মাল্টা বা কমলায় আছে ভিটামিন সি। যা করোনার বিপরীতে ভাল কাজ করে। আর আমলকী? ভিটামিন সি’র রাজা। এই রাজার গল্পটাই আজ করা যাক।
হ্যাঁ, মৌসুমটাও চলে এসেছে। বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে আমলকী। এরপরও দাম একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে। তবে অন্য ফলের তুলনায় দাম অবশ্যই কম। উপকারের কথা মাথায় রাখলে একেবারে সস্তা। আমলকীর দেশীয় জাতটি আকারে খুবই ছোট। বাইরের জাতটি অপেক্ষাকৃত বড়। যার যেটি পছন্দ, খেতে পারেন। রসালো মাংসল ফল মুখে দিলে প্রথমে টক বা তিতে স্বাদ। তারপর মিষ্টি। দারুণ একটা ব্যাপার। আকারে ছোট। তাতে কী? অন্য যে কোন ফলের তুলনায় এ ফলে ভিটামিন সি’র পরিমাণ বেশি। কত বেশি? শুনে অবাক হবেন যে কেউ। গবেষণা বলছে, আমলকীতে কমলার চেয়ে ২০ গুণ বেশি পাওয়া যায় ভিটামিন সি। আর আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ, কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে আমলকীতে। এ কারণেই ভিটামিন সি’র রাজা বলা হয় ফলটিকে।
গবেষণা তথ্য তুলে ধরে পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, প্রতি ১শ’ গ্রাম আমলকীতে ৪৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি’ থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয়। সে অনুযায়ী, মাঝারি আকারের দুটো আমলকী মুখে দিলেই সারাদিনের ভিটামিন সি’র অভাব দূর হয়ে যাবে।
অবশ্য এর বাইরেও প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান রয়েছে আমলকীতে। পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, প্রতিটি আমলকীতে ১৬.২ গ্রাম শর্করা, ০.৭ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৩.৪ গ্রাম আঁশ, ৭০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.১ মিলিগ্রাম লৌহ ও ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ওয়ান থাকে। আমলকীর ভেষজ গুণও অনেক। মুখে দিলে খাওয়ার রুচি বাড়ে। হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। ভেষজ চিকিৎসকরা বলছেন, এ জন্য আধাচূর্ণ শুষ্ক ৫ থেকে ৬ গ্রাম ফল ১ কাপ পানিতে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখুন। পরে কচলিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার পানিটুকু পান করুন। তাতে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দূর হবে বমি সমস্যা। ভিটামিন সি’র অভাবজনিত রোগ সারাতেও কাজ করে আমলকী। পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তশূন্যতা দেখা দিলেও এটি মহৌষধের কাজ করে। লিভার ও জন্ডিস রোগের পথ্য এটি।
আমলকীর আরও কিছু উপকারের কথা মোটামুটি প্রমাণিত। দেশীয় ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে আমলকীর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমলকী বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় দেয়া গেলে ভাল ঘুম হয়। কাঁচা আমলকীর রস চুলে লাগানোর উপকার সম্পর্কে বরাবরই সচেতন শহুরে মেয়েরা। প্রতিদিন এ রস মাথায় দিয়ে দুই তিন ঘণ্টা রাখা গেলে এবং একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুলপড়া এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হয়। আমলকীর আচার জেলি মোরব্বার কথাও অজানা নয় কারও। এ ফল দিয়ে তৈরি আচার জেলি মোরব্বা অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। তবে বাসায় এসবের বন্দোবস্ত সবাই করতে পারবেন না। তার চেয়ে বরং টাটকা দুটি আমলকী মুখে পুরে দিন। কাজের কাজটি হয়ে যাবে!