হারানো চাকরি ফিরে পেলেন বিনাদোষে কারাভোগকারী জাহালম
আব্দুল্লাহ আল নোমান: প্রায় তিন বছর পর হারানো চাকরি ফিরে পেলেন জাহালম (৩৫)। তিন বছর বিনা দোষে কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়ে ফিরে পেলেন তার চাকরিটিও। গত মঙ্গলবার (২৩এপ্রিল) তিনি তার কর্মস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুটমিলে পূণরায় যোগদান করেছেন। বর্তমানে সেখানে তিনি কাজ করছেন।
শুক্রবার (২৬এপ্রিল) রাতে জাহালামের বড় ভাই শাহানুর মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শাহানুর মিয়া বলেন, ‘মুক্তির পর জাহালম চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় কাগজপত্র নিয়ে বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজেএমসি চেয়ারম্যান জাহালমের সকল প্রকার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তাকে স্বপদে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা মোতাবেক ১৬ এপ্রিল তিনি পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জুট মিল কর্তৃপক্ষের কাছে তার কাগজপত্র পেশ করেন। পরে তিনি মঙ্গলবার (২৩এপ্রিল) তার কর্মস্থলে নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুটমিলে পূণরায় যোগ দেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের খুব কষ্টে আমারা দিন যাচ্ছে। এক বেলা ঠিক খেতে পারলেও, অন্যবেলা ঠিক মতো খেতে পারছি না। বাড়িতে পাওনাদারা আসছে, তাদেরকে ঋণের টাকা দিতে পারছি না। আমাদের খুব করুণ অবস্থায় দিন যাচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে কি না তা নিজেও শঙ্কিত আমরা। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ছাড়া দুদকের যে ৯ জন কর্মকর্তার তদন্ত করেছে আমি তাদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। কারণ তাদের কারণেই আমার ভাই বিনা দোষে ৩ বছর কারাভোগ করেছে। তদন্ত করে জাহালমের ব্যাংকে ১৮০০ টাকা পেয়েছে কি না দুদক, যে তারা সাড়ে ১৮ কোটি টাকার মামলা দিয়েছেÑ এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
চাকরি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে জাহালম জানান, এই তিনটি বছর বিনাদোষে কারাবরণ করে শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। মানসিক অবস্থাও আগের মতো নেই। ফলে আগের মতো এখন আর কাজে মন বসে না। তাই জীবন থেকে চলে যাওয়া তিনটি বছরের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারিতে দুদকের দায়ের করা ৩৩টি মামলায় ছালেকের পরিবর্তে ২০১৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি জাহালমকে আটক করা হয়। দীর্ঘ তিনবছর ভুল আসামি হিসেবে জেলে থাকার পর এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। মুক্ত হলে তার ভাই শাহনুরকে সাথে নিয়ে ভোরেই গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়াতে পৌছান জাহালম। জাহালমকে দেখে জড়িয়ে ধরে মা মনোয়ারা বেগম কাঁদতে থাকেন। আহাজারি শেষে কারামুক্ত জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলেন মা মনোয়ারা হয়।