সখীপুরে নিখোঁজ রহস্যের সাতদিন পর স্কুলছাত্র শাকিল উদ্ধার
মোস্তফা কামাল, সখীপুর ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিখোঁজের সাতদিন পর শাকিল আহমেদ (১২) নামে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র শনিবার (৩০ জুন) সকালে টাঙ্গাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অপহরণের ঘটনা রহস্যজনক। গত (২৩ জুন) নিখোঁজের সাতদিন পর শনিবার (৩০ জুন) সকালে টাঙ্গাইল পৌরসভা মসজিদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত (২৩ জুন) সকালে সখীপুর কচুয়া মডেল স্কুলে সাইকেলযোগে যাওয়ার সময় শাকিল নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে নিখোঁজ শাকিলের মা সেলিনা বাদী হয়ে সখীপুর থানায় একটি জিডি (নং-৮২৪ তারিখ-২৪/০৬/১৮) করেন। নিখোঁজ হবার পর থেকে গত সাতদিন শাকিলের বাবা দেলোয়ার, নানা, মামা, খালু, চাচা, চাচাত ভাইসহ সকলেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে পায়নি। গত শুক্রবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল টহল পুলিশ সখীপুর কালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম কামরুল হাসান বিএসসি, স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল এবং শাকিলের বাবা দেলোয়ারকে মোবাইলে জানায় শাকিলকে তারা পেয়েছে। শনিবার (৩০ জুন) সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল, নিখোঁজ শাকিলের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন গিয়ে টহল পুলিশের কাছ থেকে শাকিলকে উদ্ধার করে আনে।
টাঙ্গাইলের টহল পুলিশ আব্দুস সামাদ টিনিউজকে বলেন, শাকিলকে তারা সাইকেল নিয়ে ঘুরাঘুরি করার সময় সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানতে পারি শাকিলের বাড়ি সখীপুর। তারপর তাদেরকে খবর দেই। কে-কখন-কিভাবে শাকিলকে টাঙ্গাইল নিয়ে গেছে শাকিল তাদেরকে চিনে না বলে শাকিল জানায়। শাকিল একেক সময় একেক কথা বলছে। একবার বলে বাড়ি থেকে বিশ হাজার টাকা নিয়ে এক লোকের সাথে প্রাইভেটকারে করে গিয়েছে। যারা নিয়ে গেছে তাদেরকে সে চিনে না। গাড়িতে ঘড়িয়েছে সময়মতো খাবার, পায়খানা প্রস্রাব করিয়েছে। তার পূর্বের সাইকেল সখীপুর জেলখানা মোড় রেখে গেছে এবং ২০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন সাইকেল ও মোবাইল সেট ক্রয় করেছে। উদ্ধারের সময় তার নিকট ২ হাজার টাকা ছিল। আরেকবার বলছে, স্কুল ফাঁকি দেয়ায় তার মা মারবে সেজন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আবার নিখোঁজ হবার পর শাকিলের মা সেলিনা বাড়ির আশেপাশের লোকদের ডেকে তার বাসা থেকে কোন প্রকার টাকা-পয়সা হারায়নি বা শাকিলও নেয়নি বলে জানায়। বিছানার তোষক উল্টিয়ে দেখিয়েছে শাকিলের বাবা শাকিলকে একশত টাকা দিয়ে গেছে, সে টাকাও নিয়ে যায়নি। তবে নিখোঁজের দিন সন্ধ্যায় কচুয়া বাজার লিয়া ডিজিটাল হোমিও হলের সামনে শাকিলকে দেখে স্থানীয় শফিকুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করলে শাকিল তাকে জানায়, সে তার খালুর ( ইলিয়াস) জন্য অপেক্ষা করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। শাকিলের চাচা লিটন টিনিউজকে বলেন, শাকিলকে খোঁজার সময় আমাকে সাথে নিয়ে গেলেও উদ্ধারের সময় আমাকে নিয়ে যায়নি। এতে সন্দেহ হয়, শরিকদের ফাঁসানোর জন্য শাকিলের নানা বাড়ির লোকজন অপহরণের নাটক সাজাতে পারে।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মুফতি কামরুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, মসজিদের সাথেই ওদের বাসা। শাকিলের মা শাকিলকে সবসময় গালিগালাজ ও অবহেলা করতো। প্রায় সময়ই সে (শাকিলের মা) এলাকার অন্যান্য মানুষের সাথেও জগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, সামান্য বিষয় নিয়েও শাকিলের মা ওকে অত্যাচার করত। শাকিলের চাচা, আব্দুল জব্বার, আব্দুল হান্নানও এলাকায় মিলেমিশে না থাকার অভিযোগ করেন শাকিলের মায়ের বিরুদ্ধে। শাকিলের অপহরণ রহস্য উদঘাটন করার জন্য শনিবার (৩০ জুন) বিকালে কচুয়া হাজি চৌরাস্তায় এক শালিসী বৈঠকের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে সখীপুর পুলিশ উক্ত বৈঠকে উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার কথা বলে। শাকিলের বাবা-মা, নানা, মামাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সখীপুর থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শাকিলের চাচা লিটনসহ আরো কয়েকজনকে থানায় ডেকে কথা শুনে। শাকিল নিজ ইচ্ছায় বাড়ি থেকে গিয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।
এ বিষয়ে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম তুহিন আলী টিনিউজকে বলেন, মা-বাবার সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। শাকিলের মা-বাবাকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সবাইকে শান্তি সহাবস্থানের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। শাকিলের পিতা দেলোয়ার যশোর বেনাপোল পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করেন।