সখীপুরে আওয়ামী লীগের কোন্দলে ৪ ইউপিতেই নৌকার পরাজয়

171

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সব কটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর ও বাসাইল) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বেয়াই জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বহিষ্কৃত এক নেতাসহ চারজন বিজয়ী হয়েছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য কর্মীসমর্থকরা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্যের আত্মীকরণ, সঠিক প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়া এবং দলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে নৌকার এমন ভরাডুবি হয়েছে। গত সোমবার (১৭ জুলাই) উপজেলার চারটি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র জানায়, উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাজাহান খান (মোটরসাইকেল) ৪ হাজার ৫৩৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগনে রনি আহমেদ (নৌকা) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৭৯ ভোট। হতেয়া রাজাবাড়ী ইউনিয়নে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন খান ৩ হাজার ৮৬২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ২ হাজার ৫৯০ ভোট।
কালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল হোসেন ৭ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ৪৭৭ ভোট। বড়চওনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আজহারুল ইসলাম ৪ হাজার ৫৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হালিম সরকার ৪ হাজার ৪৮১ ভোট পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বেয়াই ইউসুফ আলী ভূঁইয়া (নৌকা) ১ হাজার ৪৪৭ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন।




সখীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দেড় যুগ ধরে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিক-ই-রাসেল বলেন, দলীয় কোন্দল ও ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে সংসদ সদস্যের আত্মীয়দের মনোনয়ন দেওয়ায় এই ভরাডুবি হয়েছে। হতেয়া রাজাবাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পাঁচবারের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পরাজিত হয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন পাওয়াই আমার কাল হয়েছে। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে এবার বিপুল ভোটে ষষ্ঠবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতাম।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা সংসদ সদস্যের দুই আত্মীয় পরাজিত হোক এটা চেয়েছেন। তাঁরা গোপনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে, সংসদ সদস্যের অনুসারীরা গোপনে কালিয়া ইউনিয়নের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও হতেয়া রাজাবাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের বিপক্ষে ছিলেন। হাতীবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শাজাহান খান বেসরকারিভাবে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বলেন, আমি ২২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দিয়ে সংসদ সদস্যের ভাগনে রনি আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়ন সঠিক হলে চার ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতো।




সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার অভিযোগ করে বলেন, কখনো আওয়ামী লীগ না করলেও এমপির বেয়াই (সংসদ সদস্যের ভাতিজির শ্বশুর) ইউসুফ আলী ভূঁইয়াকে মনোনয়ন পাইয়ে দেন। বেয়াইকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য বানিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সুপারিশ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, ইউসুফ আলী ভূঁইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যও নন। পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয় বলেন, হাতীবান্ধা ও বড়চওনা ইউনিয়ন তৃণমূলের সুপারিশ নিয়ে ওই দুই ইউনিয়নে শাজাহান খান ও আজহারুল ইসলামের নাম পাঠিয়েছিলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তিনি জেলা থেকে শাজাহান খান ও আজহারুলের নাম কেটে তাঁর ভাগনে রনি আহমেদ ও বেয়াই ইউসুফ আলী ভূঁইয়ার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। তিনি আত্মীয়দের মনোনয়ন দেওয়ায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ নয়, সংসদ সদস্য নিজেই দায়ী।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।