সখিপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব
স্টাফ রিপোর্টার ॥
ক্লুলেস ও বহুল আলোচিত টাঙ্গাইলের সখিপুরে নৃশংসভাবে ব্যবসায়ী শাহজালালসহ জোড়া খুনের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মোস্তফাসহ জড়িত ২ জনকে টাঙ্গাইলের সখিপুর ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব-১৪, সিপিসি-৩ কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের পিপিএম প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী শাহজালাল ও মজনু মিয়া হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী উপজেলার বাঘেরবাড়ী এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোস্তফা মিয়া (২০) ও তার সহযোগী নুরুল ইসলামের ছেলে আলামিনকে (২৭) গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিম শাহজালাল এর ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে ।
জানা যায়, শাহজালাল টাঙ্গাইলের সখিপুরের হামিদপুর বাজারে দীর্ঘদিন যাবৎ মনোহারি ও মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা করে আসছিলেন। সে হামিদপুর বাজারের একজন জনপ্রিয় ও অতিপরিচিত ব্যবসায়ী। শাহজালালের চাচা মজনু মিয়া এলাকায় কৃষি কাজ করতেন। নিহত মজনু মিয়া কৃষি কাজের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে শাহজালালকে ব্যবসায়িক কাজে দোকানে সহযোগিতা করতেন। শাহজালাল ব্যবসায়িক কার্যক্রম শেষে প্রায়শই রাতের খাবার খেতে বাড়িতে যেতেন। তিনি মাঝে মধ্যে বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন এবং মাঝে মধ্যে দোকানে এসে রাত্রিযাপন করতেন। শাহজালাল যেদিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন সেই দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিং এর টাকা (আনুমানিক দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা) বাড়িতেই রাখতেন। ঘটনার দিন শাহজালাল দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গমনকালে পথিমধ্যে তার চাচা মজনু মিয়াকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে একত্রে বাড়ি ফিরছিলেন এবং পথিমধ্যে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মোস্তফার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা এবং আলামিন উভয়ে স্থানীয় একটি সমিতির সদস্য ছিল। মোস্তফা সমিতি থেকে উচ্চ সুদে বেশকিছু অর্থ লোন নেয়। এমতাবস্থায়, লোনের টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক খরচ বহনের জন্য তার বেশকিছু অর্থের প্রয়োজন ছিল বিধায় সে পেশার বাহিরে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করে। শাহজালাল যেদিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন সেই দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিং এর টাকা বাড়িতেই রাখার বিষয়টি মোস্তফা ও আলামিন জানত বলে জানা যায়। মোস্তফা নিহত শাহজালাল এর বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে নির্জন স্থানে তাকে আক্রমণ করে তার নিকট হতে ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য বেশকিছু দিন ধরে চিন্তা ভাবনা করে আসছিল। মোস্তফা বিষয়টি প্রায় কয়েক দিন পূর্বে আলামিনকে জানায় এবং আলামিন তাতে সম্মতি দেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ জুলাই আনুমানিক রাত ১০ টায় গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও আলামিন টাঙ্গাইলের সখিপুরের বাঘেরবাড়ী এলাকায় জামালের চালায় নির্জন জঙ্গলে ওৎ পেতে থাকে। শাহজালাল মোটরসাইকেল যোগে তার চাচা মজনু মিয়াকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা শাহজালাল এর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। মোস্তফা শাহজালালকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। শাহজালাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোস্তফা শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। মজনু মিয়া চিৎকার করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আলামিন লোহার রড দিয়ে মজনু মিয়ার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরবর্তীতে মোস্তফা ও আলামিন মাটিতে লুটিয়ে থাকা শাহজালাল ও মজনু মিয়াকে লোহার রড দিয়ে পুনরায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আলামিন ভিকটিমদের সাথে থাকা মোটরসাইকেলটি পাশের একটি জমিতে ফেলে দেয় এবং মোস্তফা শাহজালাল এর ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে ১টি আলামিনকে দেয় এবং অপরটি স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা টাঙ্গাইল, গাজীপুর এবং ঢাকায় আত্মগোপন করে। মোস্তফা টাঙ্গাইল এবং আলামিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। মোস্তফার দেখানো স্থানীয় একটি ডোবা থেকে নিহত শাহজালালের একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
মোস্তফা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। আলামিন গত ৩ মাস পূর্বে তার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। আলামিন ইতিপূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করেছিল এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে দেশে ফেরত আসে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় উশৃঙ্খল কর্মকান্ড করত বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করার নিমিত্তে সখিপুর থানায় ইতোমধ্যে হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই রাতে টাঙ্গাইলের সখিপুরের জামালের চালা এলাকায় দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার চাচা মজনু মিয়াকে নৃশংসহভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত শাহজালালের পিতা আবুল হোসেন ২০ জুলাই বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসি মানববন্ধন করে।