রমজানে টাঙ্গাইল শহরে যানজট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে

0 101

জাহিদ হাসান ॥
রমজানের শুরুতেই টাঙ্গাইল শহরে যানজট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের আগের দিনগুলোতে এই যানজট আরও বৃদ্ধি পাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এতে করে টাঙ্গাইল শরহবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এদিকে যানজট নিরসনে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ডাকঢোল পিটিয়ে মিটিং সিটিং করেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে যানজট নিরসনে ফলাফল শুণ্য। এছাড়া টাঙ্গাইল শহরে যানজট নিরসনে টাঙ্গাইল ট্রাফিক বিভাগও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
টাঙ্গাইল শহরে পৌরসভার নিবন্ধিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চার হাজার তিন’শ। কিন্তু বাস্তবে চলাচল করছে ১০ হাজারেও বেশি। ফলে শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে। এছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবৈধভাবে সিএনজি ও অটোরিক্সা স্ট্যান্ডের কারণে যানজট তীব্র হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শহরবাসী। অবৈধ অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে এনে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পৌরবাসী।




পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১০ সালে টাঙ্গাইলে প্রথম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। বিগত ২০১১ সালে এই অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়া শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। বিগত ২০১৮ সালে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা দাঁড়ায় তিন হাজারে। এর বাইরেও কয়েক হাজার অটোরিকশার অবৈধভাবে চলাচল অব্যাহত থাকে। সে সময় যানজট নিরসন এবং শহরে অটো চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। আরও ১ হাজার ৩০০ অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব নিবন্ধিত অটোরিকশা সকাল ও বিকেল দুই শিফটে ভাগ করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। জোড় সংখ্যা নিবন্ধিত অটো সকাল থেকে বেলা দুইটা এবং বিজোড় সংখ্যার নিবন্ধিত অটো বেলা দুইটা থেকে রাত পর্যন্ত চলাচলে নিয়ম করা হয়।




অনিবন্ধিত অটো শহরে প্রবেশ বন্ধ করা হয়। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়। শহরের যানজট দূর হয়। কিন্তু বছর খানেক যাওয়ার পরই আস্তে আস্তে শহরে অটো আবার বাড়তে থাকে। করোনাকাল শুরু হওয়ার পর ভেঙে পড়ে দুই শিফটে অটো চলাচল। এখন শহরে চার হাজার তিন’শ নিবন্ধিত অটোরিকশা চলছে। এছাড়া ছয় থেকে সাত হাজার অনিবন্ধিত বা জাল নিবন্ধন নিয়ে অটো শহরে চলাচল করছে বলে অটোশ্রমিক, মালিকসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নিরালার মোড় থেকে মেইন রোড হয়ে শান্তিকুঞ্জর মোড়, বড় কালীবাড়ির মোড়, পোস্ট অফিসের মোড়, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড, ভিক্টোরিয়া রোডের ক্যাপসুল মার্কেট এলাকা, কলেজ পাড়া মোড়ে, কলেজ পাড়া আর্টিজেন্স সড়ক, পার্কবাজার মোড়, কুমুদিনী কলেজ মোড়, নতুন বাস টার্মিনালসহ শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে।




সরেজমিনে দেখা যায়, নিরালার মোড় থেকে অটোরিকশার জট লেগে আছে। একটু একটু করে চলতে হচ্ছে অটোসহ সব যানবাহন। একই অবস্থা দেখা যায় ভিক্টোরিয়া রোডের বড় কালীবাড়ি মোড়ে। শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, শান্তিকুঞ্জ মোড় থেকে নিরালার মোড় পর্যন্ত কোয়ার্টার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই সড়ক দিয়েই মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি এমএম আলী কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। এমএম আলী কলেজের সম্মান শ্রেণির ছাত্র রাশেদুল আলম টিনিউজকে জানান, যানজটে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতেও দেরি হয়ে যায়। অতিরিক্ত অটোরিকশার কারণেই এমন যানজট হয় বলে তিনি জানান।
অটোরিকশাচালক আমিন হোসেন টিনিউজকে বলেন, অতিরিক্ত অটোরিকশা হওয়ায় যাত্রী হয় খুব কম। প্রায় প্রতিটি অটোরিকশাই দুই-তিনজন করে যাত্রী নিয়ে চলে। বাকি সিট খালি পড়ে থাকে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অটোচালকেরা। অপর চালক রাজু মিয়া টিনিউজকে বলেন, অবৈধ অটো চলাচল বন্ধ করা হলে যানজট দূর হবে। আবার বৈধ অটোচালকদের আয় বাড়বে।




পৌরসভার নাগরিক শামসুল আলম, জলিল মিয়া, আব্দুর সাত্তারসহ অনেকেই টিনিউজকে জানান, শহরের আবাসিক এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবাধে স্ট্যান্ড বসিয়েছে। এতে করে সরু রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। অটো ও সিএনজির যন্ত্রণায় শহরের রাস্তায় পা ফেলারও জায়গা থাকে না। একটার পেছনে একটা লেগে চলাচল করে। রাস্তার আয়তন বাড়েনি। নতুন রাস্তা হয়নি। কিন্তু কয়েক বছরে অটো বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই শহরবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অবৈধ অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর নিবন্ধনের চেয়ে অনেক বেশি অটো শহরের চলাচলের বিষয়টি স্বীকার করে টিনিউজকে জানান, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি শহরে নিবন্ধনবিহীন অটো চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নিবন্ধিত অটো দুই ভাগে (শিফটে) চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) দেলোয়ার হোসেন টিনিউজকে জানান, যানজট নিরসনে নিবন্ধনবিহীন ও ভূয়া নিবন্ধন নম্বরধারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রধান প্রধান সড়কে চলতে দেওয়া হবে না।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ