রমজানে টাঙ্গাইলে মিষ্টির কদর ॥ শোভা পাচ্ছে লালচে চমচম

0 123

এম কবির ॥
রমজানে দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বেই সুনাম রয়েছে টাঙ্গাইলের মিষ্টির। নেই কোনো ভেজাল, গরুর একবারে খাঁটি দুধ আর নির্ভেজাল সব উপাদান দিয়ে তৈরি হয় টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টান্ন। চুলোয় গরুর খাঁটি দুধ জ্বাল দিয়ে প্রথমে তৈরি করা হয় ছানা। পাঁচ কেজির মতো ছানার সঙ্গে মেশানো হয় ২৫০ গ্রাম ময়দা। এবার খুব ভালো করে মেখে মিষ্টির আকার দিয়ে চিনির শিরায় জ্বাল দিতে হয় কমপক্ষে আধাঘণ্টা। ক্রমশ পোড়া ইটের মতো রং ধারণ করে লম্বা মিষ্টিগুলো। এভাবেই তৈরি হয় রসালো মজাদার পোড়াবাড়ির চমচম।
জগৎ ভুলানো এই চমচম তৈরির এই কৌশল জানান টাঙ্গাইল শহরের মিষ্টিপট্টি হিসেবে পরিচিত পাঁচআনি বাজারের পলাশ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী গৌরঙ্গ কর্মকার (৫৫)। প্রায় ৩৫ বছর পোড়াবাড়ির চমচমের ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন তিনি।




গৌরঙ্গ কর্মকার টিনিউজকে বলেন, লালচে রঙের পোড়াবাড়ির চমচমের ওপর দুধ জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি গুঁড়া মাওয়া ছিটিয়ে দেওয়া হয়। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এ বিশেষ মিষ্টি আজও ধরে রেখেছে জনপ্রিয়তা। কেউ টাঙ্গাইল গেলে পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ নিতে ভোলেন না।
পোড়াবাড়ি মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রবিন সরকার টিনিউজকে জানান, টাঙ্গাইলের চমচমের দামও খুব বেশি নয়। মাত্র ২০০ টাকা কেজি। এক কেজিতে থাকে ১৬ থেকে ১৭ পিস।




পোড়াবাড়ির চমচমের রয়েছে প্রায় দু’শো বছরের ইতিহাস। এক সময় এ চমচমের ‘রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ছিল টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রাম। খাঁটি চমচম তৈরির জন্য সুনাম ছিল টাঙ্গাইল শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরের এ গ্রাম। প্রায় দু’শো বছর আগে যশোরথ হাল নামে এক কারিগর প্রথম এ মিষ্টি তৈরি করেন। সময়ের ঘূর্ণায়মান স্রোতে এ মিষ্টির বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র রয়েছে। মুখে দিলেই মিলিয়ে যাওয়া এ চমচম খেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ভোজনরসিকরা। পোড়াবাড়ি গ্রামের বাইরে শুধু টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনিসহ কয়েকটি এলাকার কারিগর এ বিশেষ মিষ্টান্ন তৈরি করতে পারেন।




স্থানীয় পাঁচআনি বাজারের ৩৫ থেকে ৪৫টি মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন তৈরি হয় পোড়াবাড়ির চমচম। বেশিরভাগ দোকানের মালিক নিজেরাই এ চমচম তৈরি করেন। আবার তাদের কাজের সহায়তার জন্য রয়েছেন ৩ থেকে ৪ জন সহযোগী। তাদের বেতন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ মণ চমচম বানানো হয়। টাঙ্গাইলের বাইরে অনেক কারিগর এ চমচম তৈরি করতে গিয়েও সফল হননি। তাদের হাতে তৈরি পোড়াবাড়ির চমচমের সেই স্বাদ পাওয়া যায়নি। পোড়াবাড়ির চমচম তৈরিতে প্রতিদিন কী পরিমাণ দুধের প্রয়োজন হয় এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি কোনো কারিগরই। তবে তারা টিনিউজকে জানান, টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তারা দেশি গাভীর দুধ সংগ্রহ করেন। এজন্য প্রতিটি মিষ্টির দোকানেরই আলাদা কর্মী রয়েছে। বিদেশি গাভীর দুধে তৈরি মিষ্টির স্বাদটা ফিকে হয়ে আসে।




পোড়াবাড়ির চমচম ছাড়াও এসব দোকানে রসগোল্লা, আমিত্তি, জিলাপি, কালোজাম, রাজভোগ ও দই তৈরি হয়। তবে বেচা-বিক্রিতে শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে চমচম। স্থানীয় মিষ্টির কারিগর রাম ঘোষ টিনিউজকে জানান, পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির প্রধান উপকরণ দুধের ছানা, ময়দা আর চিনি। এসব উপকরণে তৈরি চমচমে নরম ভাব যেমন, তেমন ঘ্রাণেও অনন্য রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ