যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি ॥ শত-শত পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

116

স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যমুনা নদীর পূর্বপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। এই ভাঙনে ঘরবাড়ি, বসতভিটা ও ফসলী জমি হারিয়ে শত-শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সরকারিভাবে জিওব্যাগ ফেলাসহ নদীপাড়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে।




জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিন ধরে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং জিওব্যাগ ডাম্পিং না করায় উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়া এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি, ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থানের অর্ধেক জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জিওব্যাগ না ফেললে শত শত বসতভিটাসহ ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান,স্কুল-মাদ্রাসা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।




এদিকে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৪ আগস্ট ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নিলেও এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে কোন প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা।




পাটিতাপাড়া ভাঙন কবলিত এলাকার জরিনা বেগম, সিরাজুল ইসলাম, নজরুল পাগলা ও সজল মিয়াসহ অনেকেই টিনিউজকে বলেন, যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তাদের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ওই এলাকার প্রায় ৫০ বছর আগের কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া পথে। দু-একদিনের মধ্যে বিলিন হতে পাড়ে এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। মজিবর রহমান টিনিউজকে বলেন, উপজেলার দুই ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিওব্যাগ ফেলা হলেও মাঝখানে কিছু অংশ ফাঁকা রয়েছে। সেই ফাঁকা স্থানে পানির চাপ বেশি পড়ায় তীব্র ভাঙন দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করি।




এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন টিনিউজকে জানান, ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে বিধায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার বলা সত্বেও তারা ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তিনি আরও জানান, ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলার জন্য কেউ যদি টাকা চায় বা নেয় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন টিনিউজকে জানান, সম্প্রতি যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে নিকরাইল ও মাটিকাটা ইউনিয়নে ভাঙনরোধে কয়েক দফায় ৮:৫ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে দ্রুত স্থায়ী বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।