মির্জাপুর পৌরসভায় মেয়র ও নারী কাউন্সিলরসহ ৫৭ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে

0 281

1এস এম এরশাদ, মির্জাপুরঃ
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভায় তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন। আসছে ১৭ জানুয়ারি এই পৌরসভার মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন পেতে ভোটারদের কাছে টানার পাশাপাশি দলীয় কাউন্সিলরদের সাথে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা এলাকায় জনসংযোগ ও উঠান বৈঠক শুরু করেছেন। দেখা-সাক্ষাৎ, মৃত বাড়ি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ, ব্যানার ফেস্টুন ও স্থানীয় সংবাদপত্রে শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। মির্জাপুর পৌরসভায় আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৫২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর অনেকেই নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।
বর্তমান পৌর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা সদর ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শহিদুর রহমান শহীদ। তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যানার, ফেস্টুন ও উঠান-বৈঠকের মাধ্যমে কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কথাবার্তা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি মির্জাপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় মির্জাপুর পৌরসভা গঠিত ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিগত ২০০২ সালে মির্জাপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে লবিং করেন। সমর্থন না পেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনির নিকট পরাজিত হন। দীর্ঘ ৯ বছর পর ২০১০ সালে মির্জাপুর পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনেও তিনিসহ আরও কয়েকজন দলীয় সমর্থন পেতে দলের নেতাকর্মীদের সাথে লবিং করেন। দল কাউন্সিলরদের ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ভিপি সাহাদত হোসেন সুমনকে সমর্থন দেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি ও শহীদুর রহমান শহীদ প্রতিদ্বন্দিতা করেন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুর রহমান শহীদ মেয়র নির্বাচিত হন।
আগামী পৌরসভা নির্বাচনে শহীদ ছাড়াও সাবেক মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদত হোসেন সুমন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু দলীয় সমর্থন চাইবেন বলে জানা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদত হোসেন সুমন দলীয় প্রার্থী ঘোষনা দিয়ে এলাকায় ভোটারদের মধ্যে জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির মির্জাপুর পৌরসভায় এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদত হোসেন সুমন। দলীয় নেতাকর্মীরা মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষে সাহাদত হোসেন সুমনকে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এদিকে পৌর বিএনপির সভাপতি মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক জিএস ও ভিপি, বিআরডিবির সাবেক দুই বারের চেয়ারম্যান হযরত আলী মিঞা দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি পৌর এলাকার বাড়িতে বাড়িতে ভোটারদের সাথে বৈঠক ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
গতবার এ পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ হাজার। আগামী নির্বাচনে এ পৌরসভায় ভোটার ২০ হাজার ১৫১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১০ হাজার ৬২০ এবং ৯ হাজার ৫৩১ পুরুষ ভোটার রয়েছে বলে উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করছেন।
এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর এস এম রাশেদসহ ৩ জন, দুই নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলরের ছেলে সাহাদত হোসেন সাইম সহ ৬ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আলী আজম সিদ্দিকী সহ ৬ জন, ১,২,৩ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নিলুফা বেগমসহ ৪ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর হাফিজুর রহমানসহ ৩ জন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজ মিয়া সহ ৪ জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জালাল উদ্দিনসহ ৬ জন, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৪ জন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আলী আজম খানসহ ৩ জন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রিপন ঠাকুরসহ ৪ জন ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন সহ ৫ জন ও ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আঙ্গুরি বেগম সহ ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।
এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। একাধিক দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় সমর্থন চাওয়ার পর মেয়র পদে ও ওয়ার্ডে একজন করে কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে। বাকিরা সমর্থন না পেলে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না থাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেই দলীয় সমর্থন চাইবেন না বলেও জানা গেছে। অপরদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীরা এলাকার জনসাধারণের চাইতে দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে বেশি সময় পার করছেন বলে জানা গেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ