মির্জাপুর পৌরসভায় নৌকার মাঝি সুমন ॥ ধানের কৃষক হযরত
এস এম এরশাদ, মির্জাপুরঃ
নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মাঝি হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদৎ হোসেন সুমন ও ধানের শীষের কৃষক হলেন পৌর বিএনপির সভাপতি হযরত আলী মিঞা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান ফারুকের সভাপতিত্বে জেলা পরিষদ কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় মির্জাপুর পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাদৎ হোসেন সুমনের নাম ঘোষণা করা হয়।
অপরদিকে মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে উপজেলা ও পৌর বিএনপির এক সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি, সাবেক ভিপি, উপজেলা সমবায় সমিতি লি: এর সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী মিঞাকে মেয়র পদে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করা হয়েছে। এরা দু’জনেই উপজেলা সহকারি রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ১৫ বছরের বেশি সময়ের দ্বিতীয় শ্রেণির মির্জাপুর পৌরসভার তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিগত দু’টি নির্বাচনে মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও এবারের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। এ পৌরসভায় নৌকার মাঝি সাহাদৎ হোসেন সুমন ও ধানের কৃষক হযরত আলী মিঞা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে পৌরসভায় সাহাদৎ হোসেন সুমনের দ্বিতীয় ও হযরত আলী মিঞার প্রথম নির্বাচন।
বিএনপি প্রার্থী হযরত আলী মিঞা ১৯৮৭ সালে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রদলের ব্যানারে জিএস, ’৮৮ সালে ভিপি, ১৯৯৭ ও ২০০৪ সালে মির্জাপুর উপজেলা সমবায় সমিতি লি: (বিআরডিবি) এর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তিনি ২০০০ সাল থেকে মির্জাপুর পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাহাদৎ হোসেন সুমন এর আগে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ১৯৯৩ সালে ছাত্রলীগের ব্যানারে ভিপি নির্বাচিত হন। মির্জাপুর পৌরসভার ২০১১ সালে ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় নির্বাচনে সাহাদৎ হোসেন সুমন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমানের কাছে ১৪৩ ভোটে পরাজিত হন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের দু’জনেরই রয়েছে নির্বাচনের পূর্ব অভিজ্ঞতা। দু’জনেই দল ও জনগনের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যায় মির্জাপুর পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিরাজ করছে ভোটের আমেজ। চায়ের দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাট বাজারে নির্বাচনী আলোচনা জনগণের মুখে মুখে।
স্থানীয়ভাবে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদৎ হোসেন সুমন বলেন, আমি মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারলে মাদক, ভূমি দখল মুক্ত ও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করবো।
পৌর বিএনপির সভাপতি মেয়র প্রার্থী হযরত আলী মিঞা বলেন, দল আমাকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর পরিশ্রমে পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করলে মির্জাপুর পৌরসভাকে সমস্যামুক্ত আধুনিক শহরে পরিণত করবো।
মির্জাপুরে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যস্ততা-
মির্জাপুর পৌরসভা নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেছেন বর্তমান কাউন্সিলর এসএম রাশেদ, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল জলিল খান। ২ নম্বর ওয়ার্ডে সুমন হক, শাহাদত হোসেন সায়েম, মোস্তফা মিয়া। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আলী আজম সিদ্দিকী, আলমগীর মৃধা, বিপ্লব কুমার সাহা, আবু তালেব। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান, সাজু মিয়া, মিন্টু মিয়া, মাসুদ পারভেজ। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজ মিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন, শহিদুর রহমান শিপন, আলী আজম। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, বদর উদ্দিন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আলী আজম খান, রবিউল আলম রবি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রিপন চক্রবর্তী, শহীদুল ইসলাম মাসুম, তাপস সাহা, মোহাম্মদ আলী। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, আফজালুর রহমান ছানু, শাজাহান মিয়া, আব্দুল লতিফ।
এছাড়া ১,২,৩ নম্বর সংরক্ষিত নারী আসনে বর্তমান কাউন্সিলর নিলুফা বেগম, মমতাজ বেগম, হাছনা বেগম, শিল্পী পাল। ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রওশন আরা বেগম, আফরোজা আলম, কহিনুর বেগম। ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আঙ্গুরি বেগম, চন্দনা দে ও অর্চনা সরকার।
দুইজন মেয়র প্রার্থী ৩১ জন কাউন্সিলর ও তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে উপজেলা সহকারি রিটার্নিং অফিসার মাসুদ আহমেদ জানিয়েছেন।