মির্জাপুরে শুভূল্যা-বরাটি সড়ক চার বছরেও হয়নি কার্পেটিং ॥ জনদুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শুভূল্যা থেকে বরাটি বাজার পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শরীফ সড়ক এবং পল্লবী নামদারপুর জিপিএস রাস্তা দুটির প্রায় আড়াই কিলোমিটার চার বছরেও হয়নি কার্পেটিং। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একাধিকবার সময় বৃদ্ধি করেও কার্পেটিং করেননি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী শতশত মানুষ। এছাড়া ওই সড়কে চলাচলরত সকল যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করেছে বলে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফফুর রহমান জানিয়েছেন।
অপরদিকে বরাটি বাজার হতে রোহিতপুর পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে গত ২৭ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিলো। রাস্তাটি নির্মাণে মির্জাপুরের ঈমান এন্ড ব্রাদার্স কাজটি পায়। চুুক্তিমূল্য ১ কোটি ৬২ লাখ ২১ হাজার ১৭৫ টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত বছরে বেড কাটা এবং বালু ফিলিং করেছেন। রাস্তাটি নির্মাণে সম্প্রতি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইট সরবরাহ করছেন। তাও আবার সংসদ ভবনের পরিত্যাক্ত সিরামিক আনছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শুভুল্যা থেকে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের বরাটি বাজার পর্যন্ত পৌনে দুই কিলোমিটার এবং পল্লবী নামদারপুর জিপিএস রাস্তার প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার অত্যন্ত জনগুরুত্বপুর্ণ। এই সড়ক দিয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বরাটি হাটের লোকজন, বরাটি, নরদানা, বাংগল্যা, টেগুরি, শুভুল্যা গ্রামের লোকজন, বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়, বরাটি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়র শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চলাচল করে থাকে। এছাড়া ওইসব গ্রামের লোকজন বরাটি বাজার হয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে থাকে। এজন্য গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ওই সড়কটি পাকা করন কাজের টেন্ডার আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। যার চুক্তি মুল্য ধরা হয় ২ কোটি ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৬৪ টাকা। কাজটি পায় টাঙ্গাইলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তরফদার বিল্ডারর্স। কাজ শুরু হলেও তা মাঝে মাঝে থেমে যায়। যখন কাজ চলে তাও আবার খুব ধীর গতি। এভাবে কেটে গেছে চার বছর বছর তবু সড়কটির পাকা করন কাজ এখনো শেষ হয়নি। যে অবস্থায় উঁচু করে মাটি ভরাটের কথা ছিল তাও করা হয়নি। এজন্য সামান্য বর্ষা হলেই রাস্তার অনেকাংশ তলিয়ে যায় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের ৩ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিলো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সাথে ১০ ইঞ্চি বালি ফিলিং, ৬ ইঞ্চি সাববেইজ, ৬ ইঞ্চি মেকাডাম এবং ১ ইঞ্চি পুরো কার্পেটিং করার জন্য চুক্তি করেন। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি নির্মাণে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে গত দেড় বছর আগে তরিঘড়ি করে মেকাডাম সম্পন্ন করে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একাধিকবার সময় বৃদ্ধি করেও কার্পেটিং না করেই চলে যান। এছাড়া ঠিকাদার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ইট বালু সংগ্রহ করেন এবং তার বিল পরিশোধ করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় কোথাও কোথাও খোয়া উঠে গেছে আবার কোথাও কোথাও খোয়া আলগা হয়ে পানির স্্েরাতে ভেসে যাচ্ছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থী এবং জণসাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এছাড়া ওই সড়কে চলাচলরত রিকসা, ভ্যান, অটো, পিকআপ, মোটরসাইকেল, ছোট ট্রাকসহ ছোট ছোট সকল যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। একারনে সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্য়ালয় থেকে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করেছে।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক আব্দুল মজিদ বলেন, সড়কটির কাজ অনেক দিন ধরে চলছে কিন্তু শেষ হচ্ছেনা। যেভাবে খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে তাতে মোটরসাইকেলের টায়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শুভূল্যা গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ মিয়া, আব্দুর করিম এবং কদ্দুছ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার স্বার্থে সড়কের ঠিকাদারকে আমরা অনেকভাবে সহায়তা করেছি যাতে কাজটি তারাতারি শেষ হয়। তিনি আমাদের সুযোগ নিয়েছে কিন্তু কাজ শেষ করেননি। শুভূল্যা গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, করোনার সময় ঠিকাদারকে আমার বাড়িতে রেখে খাওয়াইছি। তৎকালনি ডিসি স্যারকে এনে রাস্তা নির্মাণে তাগিদ দেয়া হয়। এলাকাবাসীর সার্থে লৌহজং নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে সহযোগিতা করা হয়েছে। তারপরও ঠিকাদার রাস্তা পাকা না করেই চলে গেছে। আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বরাটি গ্রামের ইসমাইল হোসেন, রোহিতপুর গ্রামের হক সাহেব, আটঘরি গ্রাামের সাইফুল ইসলাম, তেঘুরি গ্রামের ফনিন্দ্র মন্ডল, সম্বল মন্ডল জানান, ঠিকাদারের অবহেলায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি নির্মাণে বিল্ডিং ভাঙ্গা ইট আনা হচ্ছে। কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
ওই সড়ক পাকা করন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তরফদার বিল্ডার্সের সত্তাধিকারী শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজটি দ্রুত শেষ করার তাগিদ আছে। আবহাওয়া একটু ভাল হলেই কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
ঈমান এন্ড ব্রাদার্স এর সত্তাধিকারী ঈমান হোসেন জানান, ল্যাবে পরীক্ষার পর রিপোর্ট ভালো আসায় উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে সিরামিক আনা হচ্ছে। মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদপত্র দেয়া হয়েছে। তাহার কোন সারা না পাওয়ায় চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বরাটি রোহিতপুর সড়ক নির্মাণে আনা সিরামিক সরজমিন পরিদর্শন শেষে সত্যতা পাওয়ার পর অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান।