মির্জাপুরে উচ্ছেদের নামে বন বিভাগের তান্ডব, ফাঁকা গুলি ॥ আহত ১০, সড়ক অবরোধ

0 152

1এস এম এরশাদ, মির্জাপুরঃ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বসত বাড়ি উচ্ছেদের নামে রাতের আধারে বন বিভাগের তান্ডবে মহিলা সহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে বাঁশতৈল প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ এলাকাবাসী গোড়াই-সখিপুর সড়ক প্রায় ৬ ঘন্টা অবরোধ করে রাখেন। এছাড়া এলাকাবাসী বন বিভাগের রেস্ট হাউজের জানালা ভাংচুর করেছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, এ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল বাঁশতৈল ইউনিয়নের গায়বেতিল মৌজায় ৫০৩২ দাগে যুগ যুগান্তর ধরে বসত বাড়ি বানিয়ে শুকুর আলী বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি ওই স্থানে তার ৪ ছেলে পাকা দু’তলা ভবন নির্মান করছেন। এই পাকা ভবনটি উচ্ছেদের জন্য কোন প্রকার অগ্রিম নোটিশ না দিয়ে বুধবার ভোর রাতে বাঁশতৈল রেঞ্জের রেঞ্জার ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে প্রায় দুই থেকে আড়াশ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে নির্মানাধীন ওই স্থাপনায় হামলা চালায়। তারা সীমনা প্রাচীরসহ নির্মানাধীন দু’তলা পাকা ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর করে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ওই বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে ভবনটি ভাঙ্গার চিত্র দেখা গেছে। পার্শ্ববর্তী বাড়ির ছানু মিয়া, তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগম, লাভলু মিয়া, কহিনুর বেগম, আরজান বেগমসহ প্রমুখরা জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তান্ডবের শব্দে ভোর রাতে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে তারা ঘর হতে বের হওয়ার চেষ্টা করলে দেখেন বন বিভাগের লোকজন তাদের বাড়ির প্রত্যেক ঘরের ছিটকেরি আটকিয়ে দিয়েছেন। এ কারনে তারা ঘর থেকে ওই সময় বের হতে পারেননি।
গৃহকর্তা শুকুর আলীর ছেলে বিল্লাল মিয়া জানান, তিনি পরিবার নিয়ে যে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন সে ঘরের বাইরে থেকে ছিটকেরি আটকিয়ে দিয়ে হামলা চালায় বন বিভাগের লোকজন। হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে ২০৭ ব্যাগ সিমেন্ট ও থাই গ্লাস সহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এছাড়া মোটা অংকের উৎকোচ না দেয়ায় বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই তান্ডব চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। বন বিভাগের এই তান্ডব এলাকাবাসী প্রতিরোধ করতে আসলে বন বিভাগের লোকজন লাঠিসোটা দিয়ে তাদের উপর আক্রমন করে এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন। এ সময় তাদের এলোপাথারী মারপিটে গায়রাবেতিল গ্রামের সুরুজ মিয়া, লতিফ মিয়া, তার স্ত্রী জরিনা বেগম, মোতালেব মিয়া, রেজ্জাক মিয়ার স্ত্রী রওশনারা বেগম, ওহাবের স্ত্রী মোজেদা বেগম, মজিবরের স্ত্রী আলেকজান বেগম এবং সামাদ মিয়াসহ ১০জন আহত হন। আহতদের মধ্যে জরিনা বেগম, লতিফ মিয়া, মোতালেব হোসেন ও সুরুজ মিয়াকে বাঁশতৈল ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা:) ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আহতদের মধ্যে কেউ গুলিবিদ্ধ নন বলে ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।
2সকালে এ খবর জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে বাঁশতৈল বাজারে জমায়েত হয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সকাল সাতটা থেকে বেলা সাড়ে এগারটা পর্যন্ত গোড়াই-সখিপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বাঁশতৈল রেঞ্জ অফিসের গেস্ট হাউজে হামলা চালায়। এসময় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বন বিভাগের কর্মকর্তারা তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। উত্তেজিত জনতার হামলায় হতেয়া রেঞ্জের বন প্রহরী মহেন্দ্র নাথ ও দেলদুয়ার নার্সারীর স্টাফ আয়নাল হক নামে দুইজন আহত হন। তাছাড়া বন বিভাগের দুটি মোটর সাইকেলও উত্তেজিত জনতা ভাংচুর করে বলে বন বিভাগ সুত্র জানিয়েছেন। পরে উত্তেজিত জনতা বাঁশতৈল বাজারে গিয়ে বেলা বারটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা পুণরায় গোড়াই-সখিপুর সড়ক অবরোধ করেন।
গোড়াই-সখিপুর সড়কে অবরোধ চলাকালে সেখানে বক্তৃতা করেন বাঁশতেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বিএসসি, আওয়ামী রীগ নেতা লাল মিয়া, আতিকুর রহমান মিল্টন, সামছুল আলম, বাঁশতৈল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন, মির্জাপুর উপজেলা যুব আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খোকনসহ প্রমুখ। এদিকে এ খবর পেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন এমপি দুপুর সোয়া একটার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। তাছাড়া বাঁশতৈলের রেঞ্জার ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।
বাঁশতৈলের রেঞ্জার ফরিদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গভীর রাতে উচ্ছেদ অভিযানের কথা অস্বীকার করে বলেন, টাঙ্গাইলের সব রেঞ্জের লোকজন নিয়ে ভোর ছয়টার দিকে অভিযান চালানো হয় বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া অভিযানের সময় ৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
টাঙ্গাইল বিভাগের বন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে বন বিভাগের প্রায় ২ একর জমি দখল করে অবৈধভাবে দু’তলা পাকা ভবন নির্মানের অভিযোগ করেন। এজন্য ওই ভবনের কিছু অংশ ও  সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার কথা তিনি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তবে গভীর রাতে অভিযান ও মালামাল লূটের কথা তিনি অস্বীকার করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ