মির্জাপুরে আজগানা ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদারের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদার আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সাহাব উদ্দিন সরকারকে রাজাকার বলে বিভিন্ন মহলে বক্তব্য রাখার প্রতিবাদে রবিবার (৩০ জুলাই) সকালে আজগানা ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক মানুষ হাটুভাঙ্গা বাজারে এই কর্মসূচি পালন করেন। একাত্মতা ঘোষণা করে ইউনিয়ন পরিষদের দুই নারী সদস্যসহ ৮ জন সদস্যও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
জানা গেছে, রবিবার (৩০ জুলাই) সকাল থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন হাটুভাঙ্গা বাজারে জমায়েত হন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে একটি মৌন মিছিল নিয়ে হাটুভাঙ্গা এলাকায় গোড়াই-সখিপুর সড়ক হয়ে বাজারে এসে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। এসময় বিভিন্ন গ্রাম থেকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লেখা ফেস্টুন নিয়ে দলে দলে কর্মসূচিতে লোকজন অংশ নেয়।
এতে ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল কাদের, ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আখতারুজ্জামান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম সরকার, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছানোয়ার হোসেন, সংরক্ষিত নারী সদস্য লুবনা খানম ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা প্রমুখ বক্তৃত করেন।
এলাকাবাসী জানান, আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদারের বিরুদ্ধে গত ১৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে পরিষদের আটজন সদস্য ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সাংসদ খান আহমেদ শুভ, দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে।
এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের ভাতিজা খাইরুল ইসলাম ইমন খালেক নামের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিতে করা একটি মন্তব্যে ইউপি সদস্য লুবনা খানমকে ‘গণধর্ষণের জন্য প্রস্তুত থাকো লুবনা আপা’ মন্তব্য লিখে হুমকি দেন। এছাড়া আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মো. সাহাব উদ্দিন সরকারকে রাজাকার বলে বিভিন্ন মহলে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের। চেয়ারম্যানের এহেন কর্মকান্ডে ফুসে উঠেছে শত শত মানুষ।
ইউপি সদস্যরা বলেন, আব্দুল কাদের সিকদার গত বছরের ১৭ জুলাই শপথ নিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পর থেকে পরিষদে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করছেন। তিনি টিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপির ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত করছেন। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রেও কমিশন নিয়ে থাকেন। পরিষদের মেম্বারদের সাথে সমন্বয় না করে নিজেই প্রকল্পের সভাপতি হন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে আইন আদালতের ভয় দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন। পরিষদের নারী সদস্যদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন ও অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করার অভিযোগও করেন তারা।
এছাড়া ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি বিধি বিধান উপেক্ষা করে তার চাহিদামত টাকা দেয়া না হলে তিনি ট্রেড লাইসেন্স দিতে নানা অযুহাতে হয়রানি করে থাকেন বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আখতারুজ্জামান বলেন, আমার বাবা আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সাহাব উদ্দিন সরকার সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদার রাজাকার বলে বক্তব্য রাখেন। মনন মাহাথির সম্পাদিত ‘শত বর্ষের সফল ব্যক্তি মির্জাপুর’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ওই বইয়ের ৩৫ নম্বর পাতায় মুক্তিযোদ্ধের সময় আমার বাবার ভূমিকার প্রশংসা এবং সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়েছে। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে চেয়ারম্যানের বিচার দাবি জানাই।
আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার তার বিরদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি এক বছর। এরমধ্যে যত কাজ করেছি সবই দৃশ্যমান। আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সাহাব উদ্দিন সরকারকে রাজাকার বলেছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এলাকার লোকজন বলে, তাই আমি বলি। আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে, না কোন প্রমাণ নেই।