মাভাবিপ্রবি’র শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেকৃবি’তে ॥ প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম
মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি ॥
টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তারা জরুরী সভা করে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে তারা পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
জানা গেছে, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভাগ ২০২২ সালের ২৫ মে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারই অংশ হিসেবে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগ এবং ফার্মেসি বিভাগে তিনজন করে মোট ছয়জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী ১৩ ও ১৪ আগস্ট সকাল ১০টায় শেকৃবির প্রশাসনিক ভবনে হবে এই পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নেবে যথাক্রমে ৮১ ও ৯৫ জন প্রার্থী। এদিকে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। তাদের ভাষ্য, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অন্য স্থানে নেওয়া সম্মানহানীর। এর পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর ফলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এর আগে গত সোমবার শিক্ষক সমিতির সভায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় শিক্ষক সমিতি একটি অনুলিপি উপস্থাপন করেন। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাসুদার রহমান স্বাক্ষর করেছেন।
অনুলিপিতে বলা হয়, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের যথেষ্ট সুবিধা ও পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ঢাকাস্থ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অমর্যাদাকর এবং এর পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ভাসানীর অবকাঠামোর বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন অযৌক্তিক এবং এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর ভেতরে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ইতিমধ্যে আল্টিমেটামের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এখনও এ বিষয়ে অনঢ় অবস্থানে রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, ২০২২ সালের ২৫ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফার্মেসী ও বিএমবি বিভাগে একটি করে মোট দুইটি সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা আইনত অবৈধ। গত ২১ মার্চ শিক্ষকদের সাথে ভাইস চ্যান্সেলরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা ভাইস-চ্যান্সেলরকে অবহিত করা হয়। যেখানে বলা হয়, প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাই পদ্ধতি সম্পর্কে স্ব-স্ব বিভাগের সকল শিক্ষকের মতামত একাডেমিক কমিটি হয়ে অনুষদের ডিন এর মাধ্যমে ভাইস-চ্যান্সেলর এর নিকট প্রেরণ করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিল ও রিজেন্ট বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। বিভিন্ন বিভাগ ইতোমধ্যে তাদের মতামত ডিন অফিসের মাধ্যমে ভাইস-চ্যান্সেলরের নিকট প্রেরণ করেছেন। এ বিষয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে শিক্ষকবৃন্দ এখনও অবগত নন। শিক্ষক সমিতির গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে কী কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষকদের অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, উপাচার্য নিজের ইচ্ছেমতো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাচ্ছেন। এর আগেও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তবে উপাচার্য কোনো তোয়াক্কা করেননি। আমাদের ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ থাকতেও অন্য ক্যাম্পাসে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে পরিস্কার নয়। উপাচার্য তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে অন্য ক্যাম্পাসে পরীক্ষা আয়োজন করতে পারেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষকই এই নিয়োগের বিরোধিতা করছেন। তবুও উপাচার্য অন্য ক্যাম্পাসে পরীক্ষা আয়োজনের পায়তারা করছেন।
এদিকে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, দুই বিভাগের পরীক্ষায় প্রায় দুই শতাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন। তাদের বসানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো কোনো জায়গা নেই। এর আগেও দুইবার এই পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটু দূরে হওয়ায় চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অনেকেই অংশ গ্রহণ করতে চান না। অনেক প্রার্থী অনুপস্থিত থাকেন। ঢাকায় পরীক্ষা হলে আবেদনকৃত সব প্রার্থীই অংশগ্রহণ করেন। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য পরীক্ষা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাসুদার রহমান বলেন, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে সেটা নিরসনের সব থেকে উৎকৃষ্ট উপায় ছিল আলোচনা। কিন্তু আমাদের ভাইস-চ্যান্সেলর স্যার এমন স্বেচ্ছাচারিতামুলক মানসিকতা পোষণ করেন যে, কারো সাথেই কোন আলোচনা নয়, উনি যা ভালো মনে করেন সেভাবেই কাজ সম্পাদন করতে চান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাঁর নিজের খেয়াল খুশিমত সিদ্বান্তে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলেই ক্ষুব্ধ। নিজস্ব ক্যাম্পাসে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করায় আমাদের সকলের মনে সন্দেহ দানা বাধছে।
এ বিষয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি এ ঘটনা নিয়ে খুবই বিরক্ত বলেও জানান।