মধুপুরে গোপনে গর্ভপাতের সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যু ॥ পল্লী চিকিৎসকসহ তিনজনকে আটক
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুরে গোপন প্রেমে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে অবশেষে প্রাণটাই দিতে হলো রোকসানা (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীর। বিয়ে না হলেও সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় ঘটেছে বিপত্তি। অতঃপর লোকলজ্জার ভয়ে গোপনে গর্ভপাতের সময় নবজাতকসহ মারা যান তিনি। সোমবার (২৬ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুরে পল্লী চিকিৎসককে দিয়ে গর্ভপাত করাতে গিয়ে ওই কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত রোকসানা জামালপুর সদর উপজেলার গান্দাইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। চলতি বছর তিনি এইচএসসি পাশ করেন। এ ঘটনায় জড়িত দুইজন পল্লী চিকিৎসকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- পল্লী চিকিৎসক ফাতেমা বেগম ও ছালেহা বেগম এবং অ্যাম্বুলেন্সের চালক সাগর মিয়া।
নিহত ওই কলেজছাত্রীর বোন জামাই টিনিউজকে জানান, রোববার (২৫ জুন) বিকেলে তার ছোট বোনকে নিয়ে মধুপুর উপজেলার দিগপাইত বাজারে আসেন ওই কলেজছাত্রী। সেখানে বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বোনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। সোমবার (২৬ জুন) সকালে টাঙ্গাইল পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় তিনি মারা গেছেন। তাঁর মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
নিহত রোকসানার মা ফাতেমা বেগম টিনিউজকে জানান, আমার মেয়ের বিয়ে হয়নি। অথচ সে প্রেম করে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়। পরিবারের কাউকে বিষয়টি জানায়নি। রোববার (২৫ জুন) মার্কেটিংয়ে চাকরির কথা বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। পরে পুলিশ মোবাইল করে জানায় আমার মেয়ে মারা গেছে। যে আমার মেয়ের এই সর্বনাশ করেছে আমি তার শাস্তি চাই।
মধুপুর থানার উপপরিদর্শক আমির হোসেন টিনিউজকে জানান, কলেজছাত্রী রোকসানার সঙ্গে কোনো এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তিনি সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়েন। সাত মাসের গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য মধুপুরের জামালপুর রোডে হাসপাতালের পশ্চিমে এক পল্লী চিকিৎসকের চেম্বারে যোগাযোগ করেন তিনি। সেখানে রোববার (২৫ জুন) রাতে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশে পাঠানো হলে পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। অ্যাম্বুলেন্স চালক ও তাঁর সহযোগীরা কলেজছাত্রীর লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ পরে অনুসন্ধান চালিয়ে অবৈধ গর্ভপাতে জড়িত পল্লী চিকিৎসক ফাতেমা বেগম ও ছালেহা বেগম এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক সাগর মিয়াকে আটক করেছে।
মধুপুর থানার উপপরিদর্শক টিনিউজকে আরও জানান, এই ঘটনায় মধুপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কলেজছাত্রীর সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. এ কে এম হাবিবুল্লাহ বাহার টিনিউজকে বলেন, অজ্ঞাত পরিচয়ে হাসপাতালে লাশ নেয়া হয়। পরে পরিবারের লোকজন এসে লাশ সনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।