বিকল্প খুঁজতে টাঙ্গাইলের মাদকসেবীরা ছুটছে অসাধু ফার্মেসিগুলোতে

160

রঞ্জিত রাজ ॥
টাঙ্গাইল জেলাসহ দেশব্যাপী চলছে মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। যার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দেয়ায় টাঙ্গাইল জেলার মাদকসেবীরা ছুটছে কতিপয় অসাধু ফার্মেসিগুলোতে। এখানে কম মূল্যে ও সহজে তারা পাচ্ছে নেশা জাতীয় দ্রব্য। অনেক মাদকসেবী নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত মনে করে প্রকাশ্যে ভিড় জমাচ্ছে ওইসব ফার্মেসিগুলোতে। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা ওষুধ প্রশাসন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসন কার্যকর কোন ভূমিকা পালন না করার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে জেলায় মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে গত ৩০ দিনে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসন ৫৩১জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে তিনজন বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তবে এ অভিযানে এখন পর্যন্ত জেলার চিহ্নিত ও মাদকের গডফাদারদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
একাধিক মাদকসেবী টিনিউজকে জানান, আগের মতো এখন সহজে মাদকদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিকল্প মাদকের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। তারা বলেন, একটি ইয়াবা ট্যাবলেট তিনশ’ থেকে পঞ্চাশ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতো। এখন এর দাম হাকানো হচ্ছে সাতশ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। এক পুরিয়া গাঁজার দাম অভিযানের আগে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে একশ’ থেকে ১২০ টাকা। ফেন্সিডিল হাজার থেকে ১২শ’ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে এসব মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করতে নিরাপদ মনে করছে না মাদক সেবী ও বিক্রেতারা। তাই অধিকাংশ মাদকসেবী বিকল্প নেশার দিকে ঝুঁকছেন। এ সুযোগে টাঙ্গাইল জেলা ও উপজেলার এক শ্রেণির অসাধু ফার্মেসি বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কোনো ঝুঁকি ছাড়াই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দেদারছে বিক্রি করে যাচ্ছে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ফার্মেসিগুলোতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ঘুমের ওষুধ। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসি থেকে কেনা যাচ্ছে প্যাথেড্রিন থেকে শুরু করে এ জাতীয় আরও অনেক ওষুধ। টাপেন্টা, পেন্টাডল, মাইলাম, লাইজন, সেডিল, এক্সিউনিল, ক্লোসান, মিলাম ও ডর্মিকামের মতো উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু অতি মুনাফার আশায় ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদেরও ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন কোন ফার্মেসির মালিকের কাছে এসব ওষুধ বিক্রি করা নিষেধ। কিন্তু বিক্রয় প্রতিনিধিরা সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে নাম সর্বস্ব ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি করছে।
মাদকসেবীরা ফার্মেসি থেকে মাদকদ্রব্য তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে কফ, কাঁসের জন্য ব্যবহৃত সিরাপ সংগ্রহ করেন। এতে কিছু কিছু কোম্পানির সিরাপে অ্যালকোহলের পরিমান বেশি থাকে। বাজারে কাঁসের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত সিরাপের পর্যাপ্ত চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব সিরাপ ফার্মেসির মালিকেরা প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে আসছে। মাদকসেবীরা ঘুমের ওষুধের সঙ্গে কাঁসের সিরাপসহ বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করছে এক ধরনের মাদক। যার নাম দেয়া হয়েছে ঝাক্কি বা মিক্সার।
বর্তমানে একজন মাদকসেবী ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে চাহিদা মত মাদকদ্রব্যের উপকরণ সংগ্রহ করতে পারছেন। সংগৃহিত মাদক উপকরণ প্রক্রিয়াজাত করে দুই থেকে তিনজন সেবন করতে পারে। এতে একজন মাদকসেবীর জন্য যথেষ্ট বলে মাদকসেবীরা টিনিউজকে জানায়।
খুব সহজেই জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ওষুধ ব্যবসার আড়ালে বিক্রি করছে মাদকের উপকরণ ঘুমের ওষুধ ও কাঁসের সিরাপ। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি বেশি করে ঘুমের ওষুধ ও কাঁসের সিরাপ রাখছেন এখন জেলার ওইসব অসাধু ফার্মেসি মালিকরা।