বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হারার আশঙ্কা আ.লীগের মেয়র প্রার্থী

268

স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাত পোহালেই টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন। পোষ্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। নির্বাচনী প্রচারণা শেষ। এখন চলছে বিশ্লেষণ। কে হবেন পৌর পিতা।
জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা রাজিব মিয়া, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক জাবিদুর রহমান রুনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বর্তমান মেয়র রহিম আহম্মেদ মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে আব্দুর রহিম আহমেদ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের অনুসারী হওয়ায় সবাইকে টেক্কা দিয়ে তিনি মনোনয়ন নিয়েছেন।




এদিকে সংসদ সদস্য জোয়াহেরের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অলিদ ইসলামের সাপে নেউলে সম্পর্ক। কিছুদিন ধরে দুজনের মধ্যে মাঠের রাজনীতিতে একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও রহিম আহম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মেয়র থাকাকালে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করেননি। এ ঘটনায় অনেকেই তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব ঘটনায় ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করলেও গোপনে বিরোধীতা করছেন এবং নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছেন বলে জানান, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মি। এছাড়াও মেয়র হয়েও তিনি পৌরসভার তেমন কোন কাজ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। রাস্তা ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ গত পাঁচ বছরে পৌরসভার কোন উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এবার মেয়র পদ হারাতে পারেন বলে আশংকা করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা।
শিক্ষা ও মানব সম্পাদ সম্পাদক জাবিদুর রহমান রুনু বলেন, মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল যাকে ভাল মনে করেছে তাকেই দিয়েছে। তবে রহিম আহম্মেদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগই থাকনা কেন দল যেহেতু মনোনয়ন দিয়েছে তাই আমরা তার পক্ষে কাজ করছি। আশা করছি তিনিই বিজয়ী হবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে চায় বিএনপির স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সভাপতি এনামুল করিম অটল। তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য, ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, দ্রব্যমুল্যে বৃদ্ধিসহ নানা ব্যর্থতা তুলে ধরে ভোট চাইছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে কি কি উন্নয়ন করবেন তার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তিনি শংকায় রয়েছেন। এনামুল করিম অটল জানান, উপজেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মি আমার সাথে রয়েছে। জীবন যৌবন শেষ করেছি এ দলের জন্য। বাসাইল কলেজের ভিপি ছিলাম। বিএনপির দুইবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে বাসাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। তিনি বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনে আমি মাত্র ১৯ ভোটে হেরে গেছি। বর্তমান সরকার আমাকে নিলনক্সা করে হারিয়েছে। এবার ৭০ ভাগ ভোটার আমার পক্ষে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রহিম আহম্মেদ বলেন, জনগণের সেবক হয়ে কাজ করছি। অবশ্যই তাঁরা এর মুল্যায়ন করবে। শতভাগ সুষ্ঠু ভোটে আমি বিজয়ী হব। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে তার ভাষ্য, দলে কোন কোন্দল নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন।




মেয়র পদে কৃষক শ্রমিক জনতালীগ বাসাইল উপজেলা শাখার সভাপতি রাহাত হাসান টিপু অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ ভোট কেন্দ্র দখল করে, প্রভাব বিস্তার করে অতিতে সব ভোট নিয়েছে। এবারও জোর করে ভোট নেওয়ার পায়তারা করছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জয়ী হব। জনগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি তিনি দাবি জানিয়েছেন।
বাসাইল পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে প্রথম পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেন মজিবুর রহমান। ২০১৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন আব্দুর রহিম আহমেদ। বুধবার (২১ জুন) টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়রপদে তিনজন সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। পৌরসভার ১০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৩৭। এর মধ্যে নারী ভোটার ৯ হাজার ৫৩০ জন এবং পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৯০৭ জন।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত পরিমান আইনশৃংখলা বাহিনী মাঠে থাকবে। ভোট হবে ইভিএমে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এছাড়া ৯টি কেন্দ্রেই ইলেকশন কমিশনের একজন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। ভোট কেন্দ্রে কোন সমস্যা হলে তারা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিবেন।