বাসাইল ছাত্রলীগ তিন মাসের কমিটি দিয়ে চার বছর পার
হাসান সিকদার ॥
চার বছর আগে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও আর কোন সম্মেলন হয়নি। কোন কমিটিও হয়নি। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বে চলে এসেছে স্থবিরতা। ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম। সহযোগি সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতেও তাদের দেখা মিলে না। উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ কেউ ব্যবসা বানিজ্য, বিদেশে পাড়ি জমানো, অথবা বিয়ে করে সংসার সামলাচ্ছেন। কারো কারো ছেলে-মেয়েও বড় হয়ে গেছে।
জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালের (৫ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কামরান খান বিপুলকে আহবায়ক ও রুবেল তালুকদার, নিশাত খান, নাহিদ হোসেন মিম, হৃদয় খান, রাজু আহমেদ ও রিপন আহসান এই ছয়জনকে যুগ্ম আহবায়ক করে ওই সময় ৪১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ। কমিটির সময় ছিল মাত্র তিন মাস। সম্মেলন করে তিন মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য সময় বেধে দেওয়া হয়। দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় পার হলেও কোন সম্মেলন হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ, কোন্দল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বিভিন্ন হস্তক্ষেপের কারণে দীর্ঘদিন কোন সম্মেলন হয়নি। কমিটিও করা যায়নি। ছাত্রলীগের কোন নেতা আওয়ামী লীগের কোন নেতার অনুসারী এসব নিয়ে দ্বন্দের কারণে মূলত কমিটি হয়নি বলে জানান অনেক ছাত্রলীগ নেতা। আর এসব কারণে বাসাইল ছাত্রলীগের কোন নতুন নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসতে পারেনি। আহবায়ক কমিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীর ছাত্রত্ব নেই। তারা ব্যবসা-বানিজ্য ও চাকুরী নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এ কারণে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, সংগ্রামেও এদেরকে দেখা যায় না। বিগত ২০১৮ সালে যখন উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয় তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়াম লীগের সাবেক সভাপতি কাজী অলিদ ইসলামের সাথে ব্যাপক ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে কাজী অলিদ ইসলাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের পরোক্ষ সমর্থন ছিল। এ কারণে তিনি বিজয়ী হতে পেরেছিলেন। এখন সময়ের ব্যবধানে এই দুই নেতার সাথে সাপে নেউলে সম্পর্ক। আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আকবায়ক রুবেল তালুকদার ও হৃদয় খান এমপির অনুসারী। আহবায়কসহ অপর যুগ্ম আহবায়ক সবাই উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী। আহবায়ক কমিটির অনেক সদস্য আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মতিউর রহমান গাউস, পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম আহম্মেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়ের অনুসারী। এ কারনে নানা গ্রুপিংয়ের কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আহবায়ক কামরান খান বিপুল বিয়ে করেছেন। তার কয়েকটি এক্সকেভেটর ও ট্রাকটর রয়েছে। তিনি মাটি ও বালুর ব্যবসার সাথে জড়িত। যুগ্ম আহবায়ক রুবেল তালুকদার পোল্ট্রি মেডিসিনের ব্যবসার সাথে জড়িত। নাহিদ হোসেন মীম গাজীপুরে চাকুরী করেন। রাজু আহমেদ ব্যবসার সাথে জড়িত। রিপন আহসান চাকুরী করেন, হৃদয় খান বিয়ে করেছেন। সে একটি কোম্পানিতে চাকুরী করেন। শুধু নিশাদ খান পড়াশোনা করছেন। এছাড়াও কমিটির বেশির ভাগ সদস্যের ছাত্রত্ব নেই।
যুগ্ম আহবায়ক রুবেল তালুকদার বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে বিগত ২০১৮ সালে তিন মাসের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আমি যুগ্ম আহবায়ক ছিলাম। আমার বয়স হয়েছে। বিয়ে করেছি। ছাত্রত্বও নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে ভাল একটি কমিটি হোক এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।
যুগ্ম আহবায়ক নিশাদ খান বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির কারও ছাত্রত্ব নেই। নতুনদের নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য দ্রুত সম্মেলন হওয়া প্রয়োজন। যারা নেতৃত্ব দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ হোসেন মিম বলেন, অভ্যন্তরীণ নানা কারণে এতদিন সম্মেলন হয়নি। আমরাও চাই দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তন হোক।
আহবায়ক কামরান খান বিপুল বলেন, নেতৃত্বে গতিশীলতা আনতে দ্রুতই সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রীগের কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছি। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ, কোন্দল ও নানা গ্রুপিংয়ের কারণে এতদিন আহবায়ক কমিটি দিয়েই কার্যক্রম চলছে। আমরা চাই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসুক। এজন্য জেলা ছাত্রলীগের কমিটির কাছে দ্রুত সম্মেলনের তাগিদ দিয়েছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন দিক নির্দেশনা পাইনি।
বাসাইল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী জুয়েল রানা বলেন, বর্তমান ছাত্রলীগের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কসহ প্রায় সবাই বিয়ে করে ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। তাদের আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রমে দেখা যায় না। গত ৪ জানুয়ারী আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কসহ কাউকে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে দেখা যায়নি। যারা নতুন মুখ তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। বিভিন্ন কোন্দলের কারণে ছাত্রলীগ ঝিমিয়ে পড়েছে। আমরা চাই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসুক।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, বাসাইল-সখিপুর আসনের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের পরামর্শ নিয়ে আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের একটি নতুন কমিটি উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের মূল শক্তি ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন আহবায়ক কমিটি থাকায় দলের সবাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। নেতৃত্ব বিকাশেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দলে গ্রুপিং ও নানা কোন্দলের কারণে কমিটি করতে পারেনি। এছাড়াও কমিটির অনেকেই বালু ও মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত। তাই দ্রুত এই ঝিমিয়ে পরা কমিটি বাদ দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা প্রয়োজন।