বাসাইলে নৌকা বাইচে হাজারো মানুষের ঢল

79

আরিফুল ইসলাম, বাসাইল ॥
আবহমান বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও শতবর্ষের প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক এ দেশের গ্রামীণ লোক সংস্কৃতির সেই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও বিল-বাঁওড়ে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচের। থৈ থৈ জলে, ঢাক-ঢোলের তালে তালে গ্রাম বাংলার গান আর মাঝি-মাল্লার বৈইঠার ছন্দ মাতিয়ে তোলে বাসুলিয়ার চাপড়া বিলের শান্ত জলের ঢেউকে। আর সেই তালে তাল মেলাতে নৌকা বাইচ দেখতে বিশাল বিস্তৃত টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাসুলিয়া খ্যাত চাপড়া বিলের বুকে হাজারো মানুষের ঢল নামে। এরই ধারাবাহিকতায় বাসাইলের দিগন্ত বিস্তৃত জলভরা দৃষ্টিনন্দন বাসুলিয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ।




সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দৃষ্টিনন্দন ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি চাপড়া বিলে অনুষ্ঠিত হয় গ্রাম-বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ। জেলার অন্যতম বিনোদনমূলক এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে জলপথে নৌকা আর সড়কপথে যানবাহনে প্রায় হাজারো মানুষের সমাগম হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ণিল এ নৌকা বাইচের আয়োজন করেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়া স্মৃতি সংসদ।




প্রতিযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও টাঙ্গাইলে কয়েকটি উপজেলা থেকে  প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকা অংশগ্রহণ করে। ছোট, বড় ও মাঝারি নৌকা পৃথক পৃথক কয়েকটি রাউন্ডে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত রাউন্ডে বিজয়ী হয়েছে পাটুলি গ্রামের মায়ের দোয়া নৌকা । রানার্সআপ হয় বাসাইল উপজেলার কাশিলের চাচা-ভাতিজা নৌকা। পরে অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপসহ অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি নৌকাকেই আকর্ষনীয় পুরষ্কার দেওয়া হয়।




টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওলিউজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আখতার হোসেন। বিশেষ মেহমান ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বরেন্য অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।




সম্মানীত অতিথি ছিলেন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি খালিদ হোসেন খান পাপ্পু, বেঙ্গল গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মির্জা নাজমুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. কে.এম সাইফুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব আওলাদ হোসেন, শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের পরিচালক আমীমুল এহ্সান কবির, বাসাইল পৌর মেয়র রাহাত হাসান টিপু, সাবেক মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম আহমেদ, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ প্রমুখ।




প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সামাদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আমিন শরীফ সুপন, শুভেচ্ছা বক্তব্যে দেন বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার। নৌকাবাইচের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মতিয়ার রহমান গাউস ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা রাজিক এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাসাইল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নৌকা বাইচ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সোহেল।