বাসাইলের কাঞ্চনপুরে সূর্যমুখী চাষে সফলতা পেয়েছেন সোরহাব

0 42

হাসান সিকদার ॥
সূর্যমুখী চাষে আশার আলো দেখছেন টাঙ্গাইলের চাষিরা। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। কৃষি বিভাগ মনে করছে, সূর্যমুখী চাষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পূরণ হবে তেলের চাহিদা। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারিভাবে পরীক্ষামূলক শুরু হলেও এবার অনেক কৃষক বানিজ্যিক ও নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
এমনই একজন চাষি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের সোরহাব মিয়া। সরকারের প্রণোদনা হিসেবে গত বছর ১ বিঘা জমিতে ১ কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ দিয়ে তিনি চাষ শুরু করেন। সাফল্য পাওয়ায় এবার নিজ উদ্যোগে প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন সূর্যমুখীর। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন শত শত মানুষ।




উপজেলার কাঞ্চনপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের সূর্যমুখী চাষি সোরহাব মিয়া টিনিউজকে বলেন, আমি সৌদি আরব ফুলের বাগানে কাজ করেছি। ওখানে অনেক ধরনের ফুল গাছের চারা রোপণ করেছি। সৌদ আরব সূর্যমুখীর আবাদ বেশি হয় চাহিদাও অনেক। তখন আমি চিন্তা করি দেশে যেয়ে কিছু করবো। করোনার মধ্যে দেশে চলে আসি আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। পরে চিন্তা করলাম বসে না থেকে কিছু একটা করি। তারপর বাসাইল কৃষি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করি। তাদের পরার্মশে গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করি। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছি ৬-৭ হাজার টাকা। সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। এবছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে আশা করছি ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।




তিনি টিনিউজকে আরও বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিন-চারগুণ বেশি আবাদ হয় খরচ প্রায় সমান হয়। সূর্যমূখী চাষ করতে চার- সাড়ে চার মাস সময় লাগে ও দুইটা সেচ দিতে হয়। চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি। আমার বাজারে বিক্রি করতে যেতে হয় না। বাড়ি থেকে এসে ক্রেতারা নিয়ে যায়। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (অনলাইন) বিক্রি করছি। সূর্যমুখী চাষে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে সুন্দর্য বাড়ছে। আমার বাগানে বিভিন্ন এলাকা থেকে এক নজর দেখতে আসছে দর্শনার্থীরা এসে তারা ছবি তুলছে। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা ভাবনা আছে। যারা বেকার ঘরে বসে না থেকে সূর্যমুখীর চাষ করলে তারা অনেক লাভবান হবেন। তেলের চাহিদাও পূরণ হবে। উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে সব ধরণে সহযোগিতা করছে।




টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর দু’শত ৩০ হেক্টর সূর্যমুখীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত অর্জন করা হয় দু’শত ৪২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় ১৪ হেক্টর বেশি আবাদ হয়। যে আবাদ হয়েছে তা থেকে ৪’শত ৪২ মে.টন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে। জেলায় এ বছর ৬২৫ জন কৃষককে সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এওপি সার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান গ্রামের অর্ণব আল আমিন টিনিউজকে বলেন, গত বছর সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখী ক্ষেতে ঘুরতে এসে অনেক ভালো লাগে। এবছর আমিও আমার বাড়ির উঠানে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এক দিকে সুন্দর্য বাড়ছে আরেক দিকে তেলের চাষিদা পূরণ হবে। টাঙ্গাইল থেকে ঘুরতে আসা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিব মিয়া টিনিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখেছি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসলাম। সূর্যমুখী ফুলের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। রাজন সাহা টিনিউজকে বলেন, তেল উৎপাদনের জন্য বাজারে এর বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারবো। কৃষক লিয়াকত আলী খান টিনিউজকে বলেন, সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখীর চাষ করেছে দেখে অনেক ভালো লেগেছে। সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিনগুণ-চারগুণ বেশি লাভ হয়। এটার চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। আমারও ইচ্ছে আছে আগামী বছর নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখীর চাষ করার। সরকারি ভাবে যদি কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে তহালে সূর্যমুখীর আবাদ আরও বাড়বে।




টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার টিনিউজকে বলেন, ভোজ্যতেলের স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্জনের লক্ষে সরিষার আবাদ যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেভাবে সূর্যমূখীর আবাদও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখীর বড় ধরনে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। সূর্যমুখী বীজ থেকে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে সুন্দর্য বাড়ছে দর্শকরা সূর্যমুখীর ছবি তুলার জন্য ক্ষেতগুলোতে ভীড় করছে। তিনি টিনিউজকে আরও বলেন, আমরা কৃষকদেরকে সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধির জন্য যেমন উৎসাহ দিচ্ছি। তেমনি তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছি প্রতিনিয়তই তাদের পাশে থেকে। সূর্যমুখীর আবাদ কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে ধারণা দিচ্ছি। রোগ-বালাই থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের পাশে থেকে উৎসাহ প্রদান করছি। এজন্য টাঙ্গাইলে দিনদিন সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ