নির্বাচনে নাশকতার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান
মাসুদ আব্দুল্লাহঃ
পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান। তফসিল অনুযায়ী টাঙ্গাইল জেলার ৮টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেসব পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই সব পৌরসভায় ও আশপাশের উপজেলা ও এলাকায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও জঙ্গী বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন উপলক্ষে সহিংস সন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্য চালানোর আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। এজন্য বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন ও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র টিনিউজকে জানান, নির্বাচন কমিশন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী দিতে বা নির্বাচনে অংশ নিতে দিতে পারছে না। এ দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটে থাকায় বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে প্রচার, ভোট প্রদান, অংশ নেয়ার সুযোগ নিয়ে নাশকতা ও নৈরাজ্য চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। জামায়াতে ইসলামী দলের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার ঘটনায় বর্তমান সরকারের ওপর দারুণ ক্ষুব্ধ থাকার কারণে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালানোর সুযোগ নিয়ে নাশকতা ও নৈরাজ্য চালাতে পারে। বিএনপি-জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে ফাঁসির রায় প্রদান করার পর তাদের ৫ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায়ের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপক সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালানোর ঘটনা এবং এখন আবার পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণার প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবারের পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে বিএনপিসহ তাদের জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টিতে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট টাঙ্গাইল জেলায় সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালিয়েছে। বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পৌরসভায় অংশগ্রহণ এবং জামায়াত-শিবিরের সহযোগিতা কামনা করে মাঠে নামার বিষয়টিকে সন্দেহজনক ও রহস্যজনক মনে করছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পৌরসভা নির্বাচনী মাঠে নেমে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় সহিংস সন্ত্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে পেশাদার সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, চাঁদাবাজ, মাস্তান, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, জঙ্গীগোষ্ঠী প্রকাশ্যে তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে সহিংস সন্ত্রাস চালাতে পারে। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানের জন্য ভাড়ায় এসব সন্ত্রাসীদের নিয়োগ দেয়ার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সূত্র আরও জানান, তফসিল অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরপরই সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে বেশি। এজন্য নির্বাচন কমিশন থেকে পৌরসভা নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের নির্দেশ রয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পৌরসভার ভোট কেন্দ্র এবং ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সকল বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার পরিচালনা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রণয়ন করে চাঁদাবাজ, মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ব্যবস্থা করতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের সমর্থকরা যাতে নির্বাচনী আচরণ মেনে চলেন এবং কোন তিক্ত, উস্কানিমূলক ও ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে, এমন কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান হতে বিরত থাকেন সেই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পেশীশক্তি অথবা স্থানীয় ক্ষমতা দ্বারা কেউ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারেন এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা হয় তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও সকল স্তরের ভোটারদের নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করন, সকল শ্রেণীর ভোটার, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও মহিলা ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটদান করতে পারেন সে ব্যবস্থা করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর টিনিউজকে বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে অস্ত্র উদ্ধার, জামায়াত-শিবির, জঙ্গীগোষ্ঠী, পেশাদার সন্ত্রাসী, অপরাধী, দুর্বৃত্ত, মাস্তান, চাঁদাবাজরা রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এসে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নিয়ে সহিংস সন্ত্রাস চালাতে পারে। এজন্য জেলায় দ্রুত বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে।