নাগরপুরে নদী গর্ভে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ তিনশতাধিক ঘরবাড়ি
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ধুবরিয়া ও দপ্তিয়র ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে গত কয়েকদিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর যমুনার পেটে চলে গেছে নবনির্মিত দোতলা বিশিষ্ট পাইকশা মাইঝাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবারও সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গণের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে। ভাঙ্গনরোধে এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যদি ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী চৌহালী উপজেলার মতো নাগরপুর উপজেলাও এক সময় যমুনা নদীর কড়াল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাবে এমনটাই আশংকা করছেন এলাকার মানুষ।
এদিকে নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা এলাকার লোকজন গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে জীবনযাপন করছে। তিনটি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙ্গনে রোধে স্থায়ী কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় তাদের বাড়িঘর ও আবাদি জমিসহ তারা সব কিছু হারাতে বসেছেন। এতে করে চরম আতংক বিরাজ করছে এলাকাবাসির মধ্যে। এরই মধ্যে এলাকার লোকজন ভাঙ্গন আতঙ্কে তাদের সহায় সম্বল নিয়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছে।
জানা যায়, গত বছর বন্যার ভাঙ্গণে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গণরোধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবারও উপজেলার শাহজানী, আটাপাড়া, মারমা, সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, তেবাড়িয়া, ঘাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা, পাইকশা মাইঝাল, ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা, কৃঞ্চদিয়ারকুল, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর , বাককাটারি, বাজুয়ারটেক, ছিটকিবাড়িসহ দপ্তিয়রের কয়েকটি গ্রাম যমুনা নদীর প্রবল ভাঙ্গণের মুখে পড়েছে। ফলে ওইসব এলাকার ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অতি দ্রুত ভাঙ্গণ প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা না নিলে সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলিী হয়ে যেতে পারে।
ঘুনিপাড়ায় আশ্রয় নেওয়া আনোয়ার হোসেন টিনিউজকে বলেন, নদীতে ভিটে মাটি সব হারিয়ে আমি আজ নিঃস্ব হয়েছি। এখন পরের আশ্রয়ে রয়েছি। তিনি সরকারের কাছে সাহায্যের দাবি জানান। এ বিষয়ে পাইকশা মাইঝাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খানম টিনিউজকে বলেন, গত বছর বন্যায় এ এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। সে সময় যদি ভাঙ্গন রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হত তাহলে আমাদের বিদ্যালয়টি যমুনায় বিলীন হয়ে যেত না। এখনও ভাঙ্গণরোধে তেমন কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। খাসঘুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাগরপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস শফিকুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, ভাঙ্গনে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙ্গণরোধে তাঁরা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেননি।
সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদুল ইসলাম অপু টিনিউজকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গণে প্রায় দুই হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গণরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে প্রতিবছর গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম ও স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু কয়েকদিন আগে সলিমাবাদ ভাঙ্গণ পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা ভাঙ্গণ রোধে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ তিন হাজার জিও টিউব ভাঙ্গণ এলাকায় ফেলনোর জন্য নির্দেশ দেন।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান টিনিউজকে জানান, ইতিমধ্যে ভাঙ্গণ এলাকা জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙ্গনে যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের ঢেউটিন ও খাদ্যসামগ্রী সহায়তা করা হয়েছে। চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে। পুর্ন তালিকা পেলে গৃহহীন সবাইকে সহযোগিতা করা হবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন টিনিউজকে জানান, জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গণ রোধে বলারামপুর ও সলিমাবাদে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বন্যা শেষ হলে শুকনো মৌসুমে স্থায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে।