নববর্ষের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নেই ইলিশের

0 155

হাসান শিকদার ॥
সময়ের আয়নায় উঁকি মারছে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৬। বাংলা পঞ্জিকার হিসাবে নতুন বছর মানেই জাতিসত্তার সুন্দরতম প্রকাশের উৎসব পয়লা বৈশাখ। গ্রামীণ জীবন থেকে উঠে আসা উৎসবটি এখন শহুরে জীবনকে ছুঁয়ে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। বৈশাখ যখন দুয়ারে তখন নানাভাবে উঠে আসে রূপালী ইলিশের কথা। সেই সুবাদে বাজারে জাতীয় মাছের দামও দারুণ চড়া। শহরবাসী অনেক নববর্ষের সঙ্গে নিজের অজান্তেই জুড়ে দিয়েছে পান্তা-ইলিশ। পান্তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও ঐতিহ্য অনুসারে ইলিশের সঙ্গে বর্ষবরণের কোন সম্পর্ক নেই। মন্তব্য করেছেন লোকগবেষক থেকে শুরু করে সংস্কৃতিজন ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, হাল আমলে বৈশাখে তৈরি হওয়া পান্তা-ইলিশ খাওয়া কালচারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতির। ইলিশের যথাযথ উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থেই বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টজনরা। জাটকা সংরক্ষণে মার্চ ও এপ্রিল-এই দুই মাসে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ‘কোনো জাল ফেলবো না, জাটকা ইলিশ ধরবো না’ প্রতিপাদ্যে পালিত হচ্ছে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ। অথচ পহেলা বৈশাখের দিন ধুম পড়ে যায় পান্তা-ইলিশ খাওয়ার। অসচেতনতার কারণে আপন সংস্কৃতির অংশ মনে করে আরোপিত সংস্কৃতির ভ্রান্ত ধারণায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে শহুরে মানুষ। চোখে পড়ে বৈশাখে ইলিশে রসনা মেটানোর বাগাড়ম্বর। সেই রসনা মেটানোর ফলশ্রুতিতে বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার হুজুগে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সারা বছরের ইলিশ উৎপাদনে। অন্যদিকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, পয়লা বৈশাখ ও আশপাশের সময়ে মূলত ইলিশের বেড়ে ওঠার সময়। এ সময় ইলিশ আসলে জাটকা থাকে, ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। তথাপি নববর্ষ উদ্যাপনের নামে অত্যুৎসাহী প্রবণতায় হিমাগারের স্বাদহীন ইলিশ খাওয়ার ঝোঁকটি দেখা দেয় প্রবল। স্বাদহীনতার পাশাপাশি হিমাগারের ইলিশটি স্বাস্থ্যসম্মতও থাকে না। বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত নববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর খাবার তালিকা থেকে ইলিশ বর্জন করেছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ