নবজাতক ফুটফুটে শিশুর বাবা হবেন কে?
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
রাস্তার ধারে ছনের ভেতর কাউকে গড়াগড়ি করতে দেখে এগিয়ে যান প্রাতভ্রমনে বের হওয়া বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের মজিরন বেগমসহ তিন নারী। কাছে গিয়ে দেখতে পান পাগলী প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। মজিরন বেগম পাগলীর কাছে গিয়ে দাইয়ের কাজটি করেন। কিছুক্ষণ পর পাগলী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এ খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন পাগলী ও শিশুটিকে দেখতে ভিড় জমান। ফুটফুটে শিশুর মায়াবী মুখ দেখে অনেকেই মমতায় আগলে নিতে কোলে তুলে নেন। কিন্তু কেউ আর শিশুটির বাবার পরিচয় দেননি। তারপরও সমাজ ব্যবস্থায় কেউ না কেউ পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। এটাই হচ্ছে মানবতা।
বুধবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ৩৫ বছর বয়সের এক পাগলী মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে মা হয়েছেন। মজিরন বেগম বাচ্চাটিকে পাগলীর কাছে দিতে চাইলে সে দুরে সরিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজন সকাল নয়টার দিকে বাচ্চাটিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিনের কাছে নিয়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরম মমতায় শিশুটিকে কোলে তুুলে নিয়ে স্নেহ করেন। এক আবেগঘন পরিবেশে তিনি বাচ্চা শিশুটির দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসার জন্য কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠান। পরে পুলিশের সহায়তায় পাগলীকে খুঁজে পেয়ে তাকেও কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন পাগলীটা প্রসুতি বিভাগে এবং শিশুটি শিশু বিভাগের নিবির পর্যবেক্ষনে আছে। মা ও বাচ্চা সুস্থ আছে বলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আলী আহসান জানিয়েছেন।
এদিকে পাগলী মা হয়েছে এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক নারী পুরুষ কুমুদিনী হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে ভীড় করছে। কেউ উৎসাহ নিয়ে শিশুটিকে দেখছে আবার কেউ শিশুটির দায়িত্ব নিতেও হাসপাতালে যাচ্ছেন।
মির্জাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, পাগলীটি কবে মির্জাপুর এসেছে তা কেউ বলতে পারেনি। যে নারী বাচ্চাটিকে ইউএনও অফিসে নিয়ে এসেছে তারাও পাগলীকে এর আগে দেখেননি। নাম জিজ্ঞাসা করলে পাগলী তিনটি নাম বলেছে। হাসপাতালের রেজিষ্টার খাতায় নাজমা। পরে আবার জিদলী এবং তিথি নামও বলেছে। পিতার নাম বলেছে মশিউর রহমান, বাড়ি বরিশাল। এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলেননি। তাবে হাসপাতালে রেখেই আমরা চেষ্টা করছি পরিচয় জানতে।
কুমুদিনী হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক অনিমেষ ভৌমিক টিনিউজকে বলেন, ইউএনও মহোদয় পাগলী মা এবং নবজাতক শিশুটিকে হাসপাতালে পাঠান। মা ও শিশুটি এখন আমাদের তত্ত্বাবধানে আছে এবং তারা সুস্থ আছে।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা বিনতে মতিন টিনিউজকে জানান, পাগলী ওই নারী সঠিকভাবে কথা বলছে না। আমরা তার সঠিক পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। পরিচয় না পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।