ধান-পাট ও রবিশষ্য আবাদে সফলতা ॥ যমুনার চরে বানভাসীদের সবুজের বিপ্লব

0 300

রঞ্জিত রাজ ॥
নদীর বুকে কোন চর জেগে উঠলে চোখে ভেসে উঠে ধু-ধু বালুচরের দৃশ্য। আর তা যদি হয় যমুনার বুকে তাহলেতো কথাই নেই। টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে যমুনার বুক চিরে জেগে উঠা বিশাল ধু-ধু বালুচরে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বানভাসী মানুষেরা। আর এই সবুজের বিপ্লব ঘটেছে বিভিন্ন ফসলের সফল আবাদের মধ্য দিয়ে।
বিস্তির্ন এ চরে সবুজ ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছেন তারা। কৃষি বিভাগের সহযোগীতা বা পরামর্শ ছাড়াই শুধুমাত্র নিজেদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৮-১০ ধরনের রবিশষ্যের আবাদ করছে এখানকার কৃষকরা। এছাড়াও বোরো ধান ও পাট, আখসহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা কৃষি বিভাগকেও। কৃষকের এমন সাফল্যে খুশি হয়ে বিভিন্ন সহযোগীতা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
ভাঙ্গছে নদী, গড়ছে নদী। এটিই নদীর চির চেনা রুপ। আর এই রুপের সাথে প্রতিটি সময়ই যুদ্ধ করে চলছে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। এ ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটেনি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘেষে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর ক্ষেত্রেও। তবে ভাঙ্গনে সব কিছু হারিয়েও আবার যুমনার বুকেই নতুন স্বপ্ন বুনছে বানভাসীরা। ভাঙ্গা গড়ার এই খেলায় জীবন যুদ্ধে মেতে উঠা সব হারানো বানবাসীরাও যে রাক্ষুসী যমুনার নির্দয় বুকে আঁকতে পারে সবুজের চিত্র এমনটাই প্রমান করে দিয়েছে ভূঞাপুরের চরাঞ্চলের বিপ্লবী মানুষেরা।
উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের যমুনার বুকে গত প্রায় ৪-৫ বছর ধরে জেগে উঠেছে বিশাল চর। যা বর্তমানে বিস্তৃত লাভ করেছে শতশত একর পর্যন্ত। এর মধ্যে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কোনাবাড়ি ও চর তেতুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের জমি জেগে উঠেছে। আর এ বিশাল চরেই বানবাসী মানুষেরা গড়েছে সম্ভাবনার নতুন সংসার। যেখানে তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে।
সরেজমিনে যমুনার বুকে জেগে উঠা বিশাল চর ঘুরে দেখা যায়, এখানে সরিষা, ভুট্রা, মশুর-খেসারী ও মাস কালাই, বাদামসহ অন্তত ১০ ধরনের রবিশষ্যের আবাদ হচ্ছে। সেই সাথে আবাদ হচ্ছে বোরো ধান, পাট ও আঁখ। অনেক পরিশ্রমের এ ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাছে বানভাসী কৃষকেরা। খানুরবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়া টিনিউজকে জানান, বর্ষা মৌসুমে এ চর পানির নীচে থাকার কারণে বালু মাটির উপর পলির স্তর জমে। যা ফসল আবাদের জন্যে খুবই উর্বর হয়ে উঠে। আর এই জমিতে আবাদ করে আমরা এখন খুবই লাভবান হচ্ছি। জুলমত আলী টিনিউজকে জানান, পানি নামার সাথে সাথে জমির মালিকরা অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মান করে। সেখানে গবাদিপশুও চড়ানো হয়। আবার অনেক কৃষক টিনিউজকে অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোক এখন পর্যন্ত তাদের কোন সহযোগীতা বা পরামর্শ দিতে আসেনি। মাঠ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তার দেখা পাননি তারা। নিজেদের চেষ্টায়ই তারা সফলতা এনেছেন। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি বিভাগ যদি গভীর নলকুপ বা অন্য কোন উপায়ে সেচের ব্যবস্থা করেন। তাহলে যমুনার এই বালুচরে ফসলের বিপ্লব ঘটানো অসম্ভব কিছুই না বলেও দাবি করেছে তারা।
এদিকে ভূঞাপুরের চরাঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাশিম টিনিউজকে জানান, বিস্তির্ন চরের বানভাসী কৃষকের এমন সাফল্যে খুবই খুশী কৃষি কর্মকর্তারা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকার কারণে হয়তো স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা ওইসব এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেনা। তবে কৃষকের এমন সাফল্যে খুশী কৃষি বিভাগ। যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন, প্রকল্প ও জাতীয় কৃষি প্রকল্পের আওতায় এনে চরাঞ্চলের এসব কৃষকদের সহযোগীতার আশ্বাসও দেন তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ