ধনবাড়ীতে প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ ॥ অনাবাদি হচ্ছে কৃষি জমি
ধনবাড়ী প্রতিনিধি ॥
প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ পোড়ানো ও ইট প্রস্তুতে কৃষি জমি উর্বর মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করা হচ্ছে। মৌসুমের শুরু থেকে অভিযোগ ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত কাঠ পুড়ানো ব্যবহারের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে কৃষি জমির উর্বর মাটি গভীর করে কেটে নেয়ার ফলে অনাবাদি হচ্ছে শত শত একর আবাদি জমি। এ চিত্র টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায়।
যদিও উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও ভূঁইয়া ব্রিকসের মালিক শাহজাহান ভূঁইয়ার ভাষ্য, দাম বাড়ায় কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না তাই খরচ কমাতে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার হচ্ছে। ১৯টি ইট ভাটায় বৈধ কাজপত্রের বিষয়ে তিনি টিনিউজকে বলেন, বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও হাইকোর্টের রিটের কাজপত্র দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এর জন্য প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করেই চলতে হচ্ছে আমাদের। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ উপজেলায় ইটভাটা ১৯টি চলমান থাকলেও এরমধ্যে পৌরসভায় তিনটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাইসেন্সও দেয়া হয়নি ইটভাটাগুলোতে।
স্থানীয়রা টিনিউজকে জানান, অধিকাংশ ইটভাটার মালিক ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মি। ক্ষমতার দাপটে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করছে তাঁরা অবিরত। বীরতারা ইউনিয়নের বালাসূতী গ্রামে ‘সোনালী ব্রিকস্’টি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এ উপজেলায় দেখানো হয়েছে। ভাটার পাশেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাজার। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে সবাই। নেতাকর্মিদের মাসোহারা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এটি। বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হলে ইটভাটা থেকে অনেকে কাঠ সরিয়ে রাখছেন। ইটের আকারকে আগের তুলনা করা হয়েছে ছোট। মাদক বেচা-কেনার অভয়ারণ্যও ইটভাটাগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনালী, জননী, রাজীব, হীরা, পরশ, ভূইয়া, আকাশ ও তাজসহ প্রতিটি ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বলছে কাঠ। শতশত মণ কাঠ স্তুপে রাখা আছে। কাঠ পোড়ানোর ফলে চিমনিতে প্রচন্ড বেগে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এর অতিরিক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশসহ ক্ষতির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্রও। কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়ার ফলে অনাবাদি হচ্ছে আবাদি জমি। ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাকযোগে কৃষিজমির মাটি দিয়ে ইটভাটার পাশে তৈরী করা হয়েছে কৃত্রিম পাহাড়। পোড়ানোর জন্য আনা হচ্ছে কাঠ। মাটি বহনের কারণে রাস্তা-ঘাঁট ও ফসলী জমি ব্যপকভাবে নষ্ট হচ্ছে। বওলা গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণের নদীর বাঁধ কেটেও বিক্রি করছে তাদের দালাল চক্র। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় চরম হতাশায় স্থানীয়রা। ইটভাটার একাধিক মালিক বলেন, মৌসুম শুরুর আগে কয়লাতে ইট পোড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঠ ব্যবহার হচ্ছে। এক টন কাঠের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। কাঠ দিয়ে প্রতি ইট পোড়াতে খরচ বাবদ ৭ টাকা এবং কয়লাতে ১০ টাকা।
বালাসূতী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম মাফিজুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, সোনালী ইটভাটা স্থাপনের আগেই রাস্তার পাশে ‘চিলড্রেন প্যারাডাইস’ নামক একটি স্কুল ছিল, ওই ভাটার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। কৃষি জমি থেকে গভীর করে মাটি কেটে নেয়ার ফলে কৃষিমন্ত্রীর কৃষিখ্যাত এ অঞ্চলকে অনাবাদি করে দিচ্ছে ইটভাটা মালিও ও তাদের দালাল চক্র। হীরা ব্রিকস্রে মাটির দালাল আবদুল মজিদ টিনিউজকে বলেন, প্রতি বিঘায় হাজারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে কৃষকদের নিকট থেকে মাটি নিয়ে ইট ভাটায় দেয়া হচ্ছে।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসলাম হোসাইন টিনিউজকে বলেন, ইটভাটাগুলো দেখার জন্য আলাদা দপ্তর রয়েছে। তারপরও যেন পরিবেশ ও জনগণে ক্ষতি করে এমন কাজ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে।
টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপরিচালক জমির উদ্দিন টিনিউজকে বলেন, ইট পোড়াতে জ্বালানী কাঠ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খোঁজ নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments are closed.