ধনবাড়ীতে পোকা দমনে কীটনাশক নয় ॥ পার্চিং পদ্ধতি

0 183

ধনবাড়ী প্রতিনিধি ॥
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় বোরো ধান ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে এখন পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ উপজেলার কৃষকরা তাদের বোরো ফসলের ক্ষেতে বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে দিচ্ছেন। এসব বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং গাছের ডালে বিভিন্ন ধরনের পোকা খাদক পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে এবং ওইসব পাখি পার্চিংয়ে বসে ক্ষণিক সময়ের বিশ্রামও নিচ্ছে। এভাবে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধান গাছ রক্ষা পাচ্ছে বলে টিনিউজকে জানান উপজেলা কৃষি বিভাগ।
মাটি, ফসল ও মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারে কৃষকরা বেশি সচেতন এখন। পার্চিং পদ্ধতি হচ্ছে পাখির মাধ্যমে ফসলের পোকা দমন ব্যবস্থা। উপজেলা কৃষি অফিস উপজেলার সব এলাকায় কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাচির্ং উৎসবের আয়োজন করেছে। এর ফলে কৃষকরা একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে পরিশ্রমও কম হচ্ছে।
পার্চিং সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ডেড পার্চিং ও লাইফ পার্চিং পদ্ধতি। ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড়। গাছের ডাল পুঁতে যে পার্চিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাকে ডেড বা মৃত পার্চিং বলে এবং ধঞ্চে রোপন করে ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী করাকে লাইফ পার্চিং বলে। তবে ধনবাড়ী উপজেলায় যে সব পার্চিং ব্যবহার হচ্ছে তার সিংহভাগই হলো ডেড বা মৃত পার্চিং।
উপজেলার পাইস্কা গ্রামের কৃষক আল আমিন ও কাউসার মিয়া টিনিউজকে জানান, কয়েক বছর আগেও আমাদের মাঠের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করত। অনেক সময় টাকার অভাবে বিষ দিতে পারিনা বা দিলেও কাজ হয় না। তাই ৩-৪ বছর ধইরা (যাবৎ) ধান ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চির আগা, বা গাছের ডালপালা গাইড়া (পুঁতে) দেই। এখন আর পোকা আসে না। আমরা টাকা খরচ ছাড়াই একটু খাটাখাটি করলেই ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলবার পাইতাছি।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ জান্নতুল ফেরদৌস ও এসএপিপিও সুজন দেবনাথ টিনিউজকে জানান, পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য তারা এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এর উপকারিতা সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সুষম সার ব্যবহারের সুফল এবং এলসিসি পদ্ধতিতে ধান গাছের পাতার রঙ পরীক্ষা করে কোন ধরনের ক্ষেতে কোন ধরনের সারের অভাব রয়েছে তাও বলে দিচ্ছেন।
উপজেল কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা টিনিউজকে জানান, ধান ক্ষেতের পোকা দমনের জন্য পার্চিং ব্যবহার পদ্ধতি ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাধারণত ধান গাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর ঘাস ফড়িং ও পাতা ফড়িং আক্রমণ করে। পোকা খাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে এর মাধ্যমে অতি সহজেই ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব হয় এবং নিরাপদ হয় ফসল। চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যাপকহারে সাড়া ফেলেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ