দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত ॥ প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা

235

রঞ্জিত রাজ ॥
দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। কার্তিকের শেষ ভাগে কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। দূর্বাঘাসে পড়ছে মুক্তার দানার মত শিশির কণা। ধান বা কচু পাতায় জমাট বাধছে কুয়াশা। টাঙ্গাইল শহরের দালান কোঠায় শীতের উষ্ণতা একটু দেরিতে এলেও গ্রামীণ জনপদে আগেই পাওয়া যায় সরব উপস্থিতি। গ্রাম-শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাপা পিঠার দোকান আর খেঁজুরের গাছ থেকে গাছিদের রস সংগ্রহ সব মিলিয়ে অপরূপ এক শীতের সকাল। শেষ বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত অনবরত টাঙ্গাইলে হালকা কুয়াশা ঝরছে।
নগর জীবনে শীতের আগমনের বার্তাটা একটু অন্যরকম। গ্রামের মতো এখানে ফসলের মাঠজুড়ে সোনালি আভায় সকাল-সন্ধ্যা মিহি কুয়াশা জমতে দেখা যায় না। কিন্তু টাঙ্গাইলে দিনে রোদের তেজ থাকলেও সকাল-সন্ধ্যায় হেমন্তের মিহি শিশির বিন্দু শীতের আগাম বার্তা নিয়ে কড়া নাড়ছে দুয়ারে। বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে, পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে বলে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সূর্যের রশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। ফলে কমতে থাকে তাপমাত্রা। আর এতেই অনুভূত হয় শীত। সে হিসেবে পুরোপুরিভাবে শীত আশার এখনো বাকি রয়েছে।
শীত মানে অনেকের কাছে আনন্দের। আর কারও কাছে যন্ত্রণার। তবে বেশিরভাগ মানুষ শীত মৌসুমকেই পছন্দের সময় হিসেবে গন্য করেন। শীতের সময় ভ্রমন প্রেমিরা বিভিন্ন জেলার পর্যটন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে থাকেন। তবে শীত মানে ভাপা পিঠার সু-মধুর গন্ধ। শীত মানে সকালে মিষ্টি খেঁজুর রসের সাথে মিতালী। শীতের সময় যতোসব রুচিশীল খাবারের আয়োজন চলে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত গ্রাম কিংবা শহরে। যাঁরা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন কুয়াশার বুকচিরে ভোরের সূর্যোদয়। বিকেলের নীল আকাশের ক্যানভাসে খেলা করছে থোকা থোকা সাদা মেঘের ভেলা। মিষ্টি রোদের খেলা চলছে সকালটায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাত নামার আগেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে চারপাশটা। হেমন্তের এই শীতের আভাস নিত্য বয়ে চলে। প্রতি বছর ঘুরে ফিরে শীতের কথাই বলে। কবির ভাষা আর প্রকৃতি যেন একই কথা বলে। ভোরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা শীতল পরশ বুলিয়ে শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। সেই সঙ্গে মৃদু কুয়াশার সঙ্গে ভোরবেলায় শিশিরও ঝরেছে কোথাও কোথাও।
শীত এসে পড়ছে তাই টাঙ্গাইলের সর্বত্র লেপ-তোষক বানানোর ধুম পড়ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে গ্রামগঞ্জে ঘুরে গৃহস্থের চাহিদা অনুযায়ী লেপ ও তোষক বানানোর কাজ করছেন মৌসুমী কারিগররা। বর্তমানে একটি লেপ বানাতে খরচ নেয়া হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা টিনিউজকে জানান, কাপড়, সুতা এবং তুলার দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধুনকররা টিনিউজকে জানান, এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। সারা বছর তাদের প্রায় অলস সময় কাটাতে হয়। শীতের সময় কয়েক মাস তাদের ব্যবসা ভালো হয়। শীতের প্রকট যতো বেশি বৃদ্ধি পাবে তাদের কাজও ততো বেশি বেড়ে যাবে।
এদিকে খেঁজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতিও চলছে। কোমরে মোটা রশি বেঁধে হাতে হাসুয়া দিয়ে গাছে উঠেন গাছিরা। রস ও গুড় পেতে বেশ আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে গাছিদের। তখন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামবাংলার কৃষকের ঘরে ঘরে খেঁজুর রস, গুড়, আমন ধানের পিঠাপুলি নিয়ে চলবে নানান রকম উৎসব।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিস সূত্র টিনিউজকে জানায়, গত কয়েকদিন থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় বাতাসের তাপমাত্রা কমে আসায় সকালের দিকে শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর রাতের দিকে গরম কাপড় গায়ে জড়াতে হচ্ছে লোকজনদের। এতে করে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঋতু বৈচিত্রের কারণে টাঙ্গাইলের এ জনপদের প্রকৃতিতে আগাম শীতের আগমন ঘটেছে।