টাঙ্গাইল পৌর শহরের সড়কগুলোর বেহালদশা ॥ কাজ যেন শেষই হচ্ছে না

0 195

আব্দুল্লাহ নোমান ॥
টাঙ্গাইল শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। ইট ও খোয়া উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার বৃষ্টি হলে সেসব গর্তে পানি জমে আরো খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েন এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ এবং কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ আরো বেশি।
এদিকে পৌর এলাকায় ড্রেন ও সড়ক প্রশস্ত করে কাজ করছে। কিন্তু ভূক্তভোগী পৌরবাসী বলছে, এ কাজ শেষ হবে কবে? দিন-মাস-বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজ যেন শেষই হতে যাচ্ছে না। জনগনের ভোগান্তি দিনদিন বেড়েই চলছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।
জানা যায়, শহরের নিরালা মোড় থেকে দিঘুলিয়া, পার্ক বাজারের সামনে থেকে হোমিও কলেজের সামনে, রেজিস্ট্রিপাড়া, নতুন বাসটার্মিনাল, মিল্কভিটা থেকে দেওলা উত্তরপাড়া হয়ে কান্দিলা বাইপাস পর্যন্ত, কোদালিয়া, সাবালিয়া, কলেজপাড়া, থানাপাড়া, কালিবাড়ী সড়ক এলাকায় সড়কের বেহালদশা। এসব সড়কে রিকশা, স্কুটার নিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে শহরের সড়কগুলোর কিছু অংশে সম্প্রতি সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সড়কের পাশে ড্রেনও নির্মাণ করা হচ্ছে। ড্রেন নির্মাণ এবং রাস্তার কাজের কারণেও সে সড়কে আবার যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিয়েও দুর্ভোগের অভিযোগ জনগণের।
অপরদিকে টাঙ্গাইলের জেলা সদর অফিস পাড়ার রাস্তারগুলোর বেহাল দশা। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পরিষদের কার্যালয়, আদালত, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়সহ জেলার গুরত্বপূর্ণ অফিসগুলোর অবস্থান এই জেলা সদরে। রাস্তার বেহাল দশা থাকার কারণে ওইসব অফিসে চলাচলরত কর্মকর্তা ও পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জেলা সদর এলাকায় গুরত্বপূর্ণ অফিস থাকা সত্বে রাস্তার সংস্কার কাজ করছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হয় এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদের। জেলা সদর অফিস পাড়ায় রাস্তায়গুলোর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তেমন সচল না থাকায় রাস্তার উপরে পানি জমে থাকে। কোথাও কোথাও অনেক বড় বড় খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে। মসজিদ রোড এলাকার রফিকুল হোসাইন টিনিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু কাজ খুব ধীরে চলায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রেজিস্ট্রি পাড়ার আসলাম শেখ টিনিউজকে বলেন, এ এলাকার রাস্তা খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে। এখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও রাস্তাঘাটে কোন উন্নয়ন নেই। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা তলিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক জীবন চলাচলে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। পৌরসভার বেশিরভাগ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
অটোরিকশা চালক আনোয়ার হোসেন টিনিউজকে বলেন, রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে গাড়ির চাকার ঘর্ষনের ফলে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। রাস্তা খারাপ থাকায় প্রতি সপ্তাহে একদিন আমাদের অটোরিকশা সার্ভিসিং করতে হয়। হামিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী টিনিউজকে বলেন, জেলা সদর এলাকায় জেলার প্রধানদের কার্যালয়। এই রাস্তাগুলোর বেহাল দশা কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় এই রাস্তায় চলাচলরত পথচারীদের।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক বিভাগ টিনিউজকে বলেন, শহরের অধিকাংশ সড়কের বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। প্রধান সড়কের আশপাশের সড়কগুলো সংস্কার কাজ চলছে। ফলে মূল সড়ক দিয়ে যান চলাচল করাতে হচ্ছে। এটা খুবই ঝামেলার। যে কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভা কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে শহরের ৩১ কিলোমিটার সড়কের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে ১৮ কিলোমিটার। ৫০ ভাগ কাজ হয়েছে। ড্রেনসহ সড়কের কাজ সম্পন্ন করতে মোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। এছাড়া শহরে আরো প্রায় একশ’ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। প্রায় একশ’ কিলোমিটার ড্রেনও নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে পৌরসভা থেকে জানা যায়। চলতি বছরের মধ্যে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ টিনিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে সংস্কার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আশপাশের সড়কের কাজ করতে ইতিমধ্যে জিওবি’র ১৪ কোটি টাকা এবং কুয়েত ফান্ডের প্রায় ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। যে কোন সময় এর কাজ শুরু হবে। চলতি বছরের মধ্যে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার সড়ক ও ড্রেনের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব হবে বলে জানান মেয়র। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ