টাঙ্গাইল পৌর শহরের প্রায় সর্বত্রই ময়লার ভাগারে পরিণত

188

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল পৌরসভা আধুনিক হলেও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ নিয়ে প্রবেশ করতে হয় জেলা শহরে। ১৩৬ বছরের পুরানো এই পৌরসভায় এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। শহরে প্রবেশের তিনটি পথেই রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয়। এই দুর্গন্ধ দিয়েই যেন স্বাগত জানানো হয় শহরবাসী ও শহরে আগত অতিথিদের।
পৌর শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা ও টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের রাবনা বাইপাসের পাশেই ফেলা হচ্ছে শহরের সকল ময়লা আবর্জনা। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৬টি উপজেলার লোকজনসহ জেলা থেকে ঢাকামুখি ও বিভিন্ন জেলায় মানুষ চলাচল করে। এছাড়াও ময়লার ভাগারের পাশেই রয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। শহরের ময়লা আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্য বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নিয়ে হচ্ছে না তারা।




পৌরসভা সূত্র জানা যায়, বিগত ১৮৮৭ সালের (১ জুলাই) টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস। ১৩৬ বছরের পুরনো এই পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ভাগাড় নির্মাণ হয়নি আজও। শহরের সব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কের পাশে।
বিগত ৯/১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে উত্তর দিক দিয়ে শহরের প্রবেশমুখে রাবনা এলাকার টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে। আর দক্ষিণ অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে শহরের আরেক প্রবেশমুখ কাগমারি বেবিস্ট্যান্ড এলাকায়। এছাড়াও শহরের আশেকপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ময়লা আবর্জনা ফেলা হলেও লোকজনদের চাপের মুখে তা বন্ধ রয়েছে। শুধু ময়লাই নয় মৃত জীবজন্তু, গরু-ছাগল, কুকুরও এই ময়লা আবর্জনার সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। এতে করে দুর্গন্ধে ওই এলাকায় দাঁড়ানো যায় না। বাসাবাড়িতে বসবাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, প্রায়ই আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ধোঁয়া ও গন্ধে আশপাশের ঘরবাড়ি ও দোকানদারদের পোহাতে হয় চরম কষ্ট। একই চিত্র দেখা যায় বেবিস্ট্যান্ড এলাকায়। সেখানে আবর্জনার ভাগাড় অতিক্রম করে দক্ষিণাংশের মানুষকে মূল শহরে ঢুকতে হয়। বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় ময়লা আবর্জনার ভাগাড় পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমএম আলী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয়বাসিন্দা শাহিনা বেগম টিনিউজকে বলেন, এই ময়লার গন্ধে আমাদের পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ময়লার গন্ধে বসবাস করাই আমাদের দায় হয়ে গেছে। মাসুদ মিয়া টিনিউজকে বলেন, এই ময়লার গন্ধে আমার বাড়িতে কোন ভাড়াটিয়া পাই না। দুগন্ধে নিজেরাও থাকতে পারি না। নিজের বাড়ি ফেলে যেতে পারি না, তাই কষ্ট হলেও বসবাস করছি। শিক্ষার্থী কফিল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন আমি কলেজ বাসে উঠি। ময়লার দুগন্ধে দুই মিনিটও দাড়িয়ে থাকতে পারি না। আমার দাবি পৌরসভা খুব দ্রুত এই ময়লা অন্যত্র সরিয়ে নিবে।




পরিবেশবিদ সোমনাথ লাহিরী টিনিউজকে বলেন, খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা পরিবেশ আইন অনুযায়ি আইন পরিপন্থি কাজ। টাঙ্গাইল পৌরসভার যে পরিমান ময়লা খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে এতে প্রচুর পরিমান মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই বিপদজনক। যে কোন সময় মানুষ মেরে ফেলতে পারে এই গ্যাস। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে বার বার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করলেও তার স্বদোত্তর পাইনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর টিনিউজকে বলেন, পৌরসভার পক্ষকে থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভাকে নির্ধারিত জায়গা দেয়ার জন্য প্রস্তাব রেখেছি। আমরা নতুন জায়গা পেলে সেখানে ময়লা রি-সাইকেল করতে পারবো। এতে আমাদের পৌরসভার পরিবেশ সুন্দর হবে।