টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তির জামিন আবেদন ১৩ বার নামঞ্জুর
আদালত সংবাদদাতা ॥
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির চিকিৎসার জন্য অন্তবর্তী জামিন আবেদন আবারও নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৩ আগস্ট) আদালত ওই নির্দেশ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবারও (১৯ আগস্ট) জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত মুক্তিকে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কারা কর্তৃপক্ষকে। সোমবার (২৩ আগস্ট) ১৩ বারের মতো তাঁর জামিন আবেদন আদালত নামঞ্জুর করলেন। এদিকে সহিদুর রহমান খান মুক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়।
গত বুধবার (১৮ আগস্ট) সকালে অসুস্থ হওয়ার পর সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে জেলা কারাগার থেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সহিদুর রহমান খান মুক্তি সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ছোট ভাই ও টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে। মুক্তি আট মাস ধরে কারাগারে আছেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) বুকে ব্যথা অনুভব করায় সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হৃদযন্ত্রে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে থাইরয়েড ও কিডনিতে কিছু সমস্যা পাওয়া গেছে। এছাড়া তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান টিনিউজকে জানান, চিকিৎসার জন্য মুক্তির আইনজীবীরা টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অন্তবর্তী জামিন আবেদন করেন। তাঁরা মুক্তির চিকিৎসার জন্য যেকোনো শর্তে জামিন প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মাসুদ পারভেজ ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, মুক্তিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ৬ বছর পলাতক থাকার পর গত (২ ডিসেম্বর) সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকে তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
বিগত ২০১৩ সালের (১৮ জানুয়ারি) টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিগত ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে এ দু’জনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রহমান খান রানা বিগত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পন করেন। প্রায় তিন বছর হাজতবাসের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। তাঁর অপর দুই ভাই কাকন ও বাপ্পা এখনও পলাতক রয়েছে।
Comments are closed.