টাঙ্গাইল পৌরবাসীর দূর্ভোগের শেষ কোথায়???
সাম্য রহমানঃ যদি বলেন কাজ কি বন্ধ, আমি বলবো, না ঠিক বন্ধতো নয় তোমোটেই।
যদি বলেন কাজ কি চলছে,আমি বলবো, না ঠিকঠাকমত কাজ তো চলছেও না মোটেই।
আমি আমার শহর টাঙ্গাইলের প্রধান কিছু সড়কগুলোর মধ্যে দুটি সড়কের মেরামতের কাজের কথা বলছি।
মসজিদরোড আর কালী বাড়ি রোড।
মসজিদ রোডে আমার পিতামহ একখন্ড জমি কিনেছিলেন সেই ১৯৪৭ সালে।সেকারনেই পৈতৃকসূত্রে ওখানেই আমার বাস।বর্তমানে এ রোডে মোটমুটি ১১টি ব্যাংক,টাংগাইল জেলার টাইলস্ এর সবচেয়ে বড় বাজার,রড় – সিমেন্টের পাইকারী বাজার, পাঁচআনি, ছয়আনি বাজার,মিষ্টিপট্টির প্রবেশমুখ সহ কেন্দ্রিয় মসজিদ বা টাঙাইল কেন্দ্রিয় জামে মসজিদটার অবস্হান।
তো এ সড়কটায় মেরামতের নাম করে ২ থেকে ৩ দিনের কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে ভৌতিক কোন অজুহাতে না আদেশে।আর ১০/১৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই কি শোচনীয় অবস্হা সৃষ্টি হয়, নাকাল হতে হয় এখানকার অধিবাসীদের তা— অকথ্য ! প্রায় ৫/৭ ইঞ্চি পানিতে তলিয়ে যাওয়া সয়লাব সড়ক আর তা সব ড্রেন উপচে ওঠা নোংরা জলে।সেসব পেরিয়েও কাল দেখলাম ষাটোর্ধ এক ধর্মপ্রাণ মানুষকে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যেতে মসজিদের দিকে। তাঁর হাতের লাঠির খুজতে থাকা গর্ত আর পায়ে নোংরা ড্রেনের পানি ভাংগার শব্দ মিলিয়ে যেন এ নগরটার হৃদপৃন্ডের প্রায় শেষ হৃদষ্পন্দনটুকুই মনে করিয়ে দিচ্ছিল আর জন্ম দিচ্ছিল ক্রোধের। আদিম মানুষের পাষবিক অন্ধকারের সেই ক্রোধ।
কি অপরাধ ঐ মানুষটার বা আমাদের?
অতি আশাবাদী বা সুবিধাভোগকারীরা বলছে, ড্রেনের কাজটা হয়ে গ্যালেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে—-তো কবে, কবে হবে শেষ এ অত্যাচারের!!! জানাবেন?
গত ফেব্রুয়ারী র ২৮ তারপর মার্চের ৩ ও ৫ তারিখে মোট তিনটা লেখা বা আকুতিতে বলেছি, মেয়র আমাদের রক্ষা করুন।আর কটাদিন মানবেতরভাবে হলেও বাঁচতে দিন অন্তত:।সামনে বর্ষা!কি উপায়টা তখন হবে!!!তখনতো আমি পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে থাকতে পারবো না।কিন্তু আপনি পারবেন।ওখানে আপনার ঘরগেরস্হালী এমনকি পেট্রল পাম্পও নাকি আছে!!!!!
তাও তো প্রায় ৪ মাস পার হয়ে গ্যাছে ওসবের।কাজ শুরু হয়েছে ৪ মাস আগে। এটুকু রাস্তা র মেরামত করতেও যদি ঐ ৪ মাসও যথার্থ সময় বলে মনে না হয়, তবে কতদিন লাগবে?
নাদের আলি রুপের ঠিকাদারদের বলি, আর কত বড় হলে তুমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবে?আমার মাথা টাঙ্গাইল পৌরভবনের ছাদ ফুড়ে আকাশ ষ্পর্ষ করার পর!
পাঁচআনি, ছয়আনি সহ সমজিদ রোডের কাজটা করছে আনিস নামের এক ঠিকাদার।জনাব আনিস, আপনার পদযুগলে এ অধমের মিনতি , কাজটুকু শেষকরে আমাদের রক্ষা করুন।
আর কালীবাড়ি রোড়ের ঠিকাদার নাকি অসংখ্য এবং দায়িত্ব নিয়েই বলছি তারা অনভিজ্ঞ আর অদক্ষ।না হলে এইচ আর খানের মোড়ের সংযোগে ড্রেনের ওপর যে স্লাব তৈরী করা হল আর তার ২০/২৫ গজ দূরে জগলু নাকি কল্যাণ রোডের সংযোগের ড্রেনের স্লাব একসংগে করা হল না কেন? ওটা তো ঢালাইয়ের পর কমপক্ষে ১৫/২০ দিন কিউরিং এর জন্য রাখতে হয়।প্রায় দেড় -দু মাস আগে প্রথমটার ঢালাই শেষ হলেও আজ ২ জুলাই দেখছি জগলু নাকি প্রয়াত ছাত্র লীগের ত্যাগী মানুষ কল্যাণ বিহারী দাসের নামে একদা নামকরণ করা সড়কের মাথায় খোড়াখুড়ি শুরু হল। একসাথে হলে তো আরো দেড় দু মাস অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারবেন না, তাই?
গতকাল দেখলাম পৌরউদ্যানে আপনার পৌরসভার গাড়ী!আর সেটা ধোয়ার কাজ চলছে!!!
উদ্যানটাকে আরেকটা মার্কেট তথা দোকানঘর বরাদ্দ দিয়ে বানিজ্য নাকি কার পার্কিয়ের জায়গা নাকি কার ওয়াশের জোন বানাতে চান— ঠিক করে বলুনতো?
উদ্যানের ভেতর যত্রতত্র চায়ের দোকানঘরের বরাদ্দ বানিজ্য, ভাড়া আদায় আর ডেকোরেটরদের বাঁশ রাখার জায়গা কি টাঙ্গাইরের পৌর উদ্যান!!!
এ সব কিসের লক্ষণ! কি বোঝাতে চান আপনি? জনগনের কাছে আপনার বার্তাটা কি?
সামনে জাতীয় নির্বাচণ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আজ রাষ্টযন্ত্রটা পরিচালিত করছে। তার পরিবর্তণই কি আপনার মূল উদ্দেশ্য! মানুষকে রিক্ত করে, তাকে অসহায় করে দিয়ে,তার চরম সর্বনাশ করে টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশটাকে কি আবার পাকিস্তান বানাতে চাচ্ছেন!
আপনার প্রতিশুতি ছিল অটোর লাইসেন্স আর দেবেন না— তারপরও দিয়েছেন। যানজটকে আরো উৎসাহীত করে নরকতুল্য করেছেন এ শহরটা।
সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে তার মাখন জমা করছেন দেশের বাইরে!
সারাদেশ যখন মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আপনার কি ভূমিকা তখন পৌরবাসীকে সংগে নিয়ে সেই লড়াইতে সামিল হতে? নূন্যতম জনমত তৈরীতে!!
সব বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর দোষ চাপিয়ে আপনি/ আপনারা পগাড় পাড় হলেও আমি/ আমাদেরতো এখানেই থাকতে হবে । এ নগরে, এদেশে।
মসজিদ রোডের আর একটা পরিচয় কিন্তু এখনও বলা হয় নি; আর সেটা হল , টাঙাইল -৫ আসনের সাংসদের ব্যবসায়িক কার্যালয়টাও এখানেই। সুয়ারেজের নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত পানি আপনাকে মাখতে হয় না শরীরে। ওটা উচু শুল্কমুক্ত গাড়ীর কারনে। তাই কি আপনি স্হবীর, নিশ্চুপ এসব অনাচার, ষড়যন্ত্র দেখেও।নাকি আপনার আদেশ কেউ মানেই না!
জনাব
সাংসদ,
জনাব মেয়র,
আপনাদের হাতে এ লেখাটা যাবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। শত ব্যাস্ততা আর চাটুকারের মাঝেও হয়তো আপনি তা পড়বেনও কিঞ্চিত ধৈর্য্য আর অনেক বেশী ক্ষোভ নিয়ে।আর তারপর ভ্র- কুঁচকে কেউ হয়তো ভাববেন———–ষ্পর্ধা!
আবার কেউ হয়তো ভাববেন —– এসব অপপ্রচারে কিচ্ছু যায় আসে না।
প্রিয় মহোদয়গণ! যায় অনেক কিছুই যায়। সবই বিলিন হয়ে যায়। আর কোনটাই ষ্পর্ধা নয়, এসব অধিকার।
পুরাতন চর আবার জাগে, জাগে তা নতুনরুপে , নতুন চর মিলিয়ে যায় যমুনার ঘোলা জলে।শুধু যমুনাই বহমান।শুধু পরিবর্তণটাই চীরস্হায়ী।
আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষই কিন্তু যমুনার আসলরুপ। তাই আসুন আরো একটু যত্নবান হই, হই সর্তক।শহরটা আপনার – আমার।এটাকে একটু বাসযোগ্য করি।কি রেখে যাচ্ছি পরবর্তি মানুষদের জন্য!!!!!
কি জবাব দেবেন আপনারা????
লেখক পরিচতিঃ সাম্য রহমান, নাট্য কর্মী, টাঙ্গাইল।