টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে! অভিমত সাবেকদের
স্টাফ রিপোর্টার ॥
বিগত সময়ে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা নিয়ে শহরে আনন্দ মিছিলসহ মিষ্টি বিতরণ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতে। কিন্তু এবার পুরোটাই ভিন্ন। নতুন কমিটি ঘোষনা করার পর থেকেই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিক্ষব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইছেন। তারা মনে করছেন শহরে অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে যারা কোনদিন জেলা ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয় ছিলেন না তাদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে সর্বশেষ আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বের একটা মানদন্ড ছিল। আন্দোলন, সংগ্রামসহ সকল কিছুতেই ছাত্রলীগের ভূমিকা অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রাণের এই সংগঠনকে আজ এই কমিটির ঘোষনার মধ্য দিয়ে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এমন নেতৃত্বের কারণে প্রকৃত ও মেধাবি শিক্ষার্থীরা আর কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে ইচ্ছা দেখাবে না। এমন অর্থব কমিটি ঘোষনার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ কলঙ্কিত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর এবং সখীপুর উপজেলার দুই ছাত্রলীগ নেতাকে দিয়ে ছাত্রলীগের জেলা কমিটি গঠন করায় পুরো জেলাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে। চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অন্যান্য সংগঠনগুলোতেও। প্রকাশ্যে কেই কিছু না বললেও অনেক নেতাকর্মী এখন ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইছেন। তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা কমিটিতে যারা ত্যাগী নেতা এবং শহরে অবস্থান, এছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন তাদের মধ্যে থেকেই বাছাই করে নতুন কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলে সংগঠনটি আরো চাঙ্গা হতো।
জানা যায়, গত শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ঘোষনা দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এতে সভাপতি করা হয় গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহানুর রহমান সোহানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের গোহাইল বাড়ি গ্রামের ইলিয়াস হাসানকে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালের (১৯ মে) গঠিত ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছিল মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে। আর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তানভীরুল ইসলাম হিমেল, রনি আহম্মেদ, শাফিউল আলম মুকুল, রাশেদুল হাসান জনি এবং শামীম আল মামুন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাবেক এক নেতা টিনিউজকে জানান, সোহানুর রহমান সোহান গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বিগত ২০১৭ সালের (১৯ মে) গঠিত হওয়া জেলা কমিটির ১১ নম্বর সদস্য। জেলার রাজনীতিতে সোহানুর রহমান সোহান একেবারেই নতুন। থাকেন গোপালপুরে। এছাড়া তিনি জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় চেনেন কিনা এ নিয়েও তার সন্দেহ রয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ইলিয়াস হাসানকে। তিনি তো থাকেন সরকারি সা’দত কলেজের মেসে। তিনি ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক এবং বিলুপ্ত জেলা কমিটির ২৯ নম্বর সদস্য ছিলেন। তাদের এই দুইজনকে জেলা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই তিনি ঠিক করেছেন ওই দুইজনের নেতৃত্বে থাকার চেয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেরে দিবেন।
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ রৌফ সাংবাদিকদের জানান, জেলা কমিটি যাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে তা কোনভাবেই সঠিক হয়নি। সংগঠনে অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছে তাদের এখনো বয়স আছে ছাত্রলীগ করার। কিন্তু এভাবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুইজনকে দুই উপজেলা থেকে এনে কমিটিতে বড় পদে দায়িত্ব দেওয়া মানে জেলার ছাত্রলীগতে ধ্বংস করে দেওয়া। তবে যে কোন এক পদে শহরের একজন ত্যাগী নেতা দেখে দায়িত্ব দিলে ভালো হতো। এভাবে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করায় এখন আর ছাত্রনেতারা রাজনীতিতে আসতে চাইবে না।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো বোঝেন এবং জানেন। তারা যে কমিটি গঠন করে দিয়েছে এজন্য অভিনন্দন জানাই। একই সাথে এই নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের পদটি শহর থেকে কয়েকজন ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে বাছাই করে দিলে ভালো হতো।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল হক আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আমার কোন বক্তব্য নেই। তবে তারা যা ভাল বুঝেছেন তাই করেছেন। তিনি এই নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান।
Comments are closed.