টাঙ্গাইল কারাগারের বন্দিরাও কথা বলবেন মোবাইল ফোনে

0 160

মাসুদ আব্দুল্লাহ ॥
কারাগারকে শুধু সাজা কার্যকরের স্থান হিসেবে নয়, সংশোধনাগারে পরিণত করতে আরেক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ কারা অধিদফতর। বন্দিদের জন্য পরিবারের আরও কাছাকাছি থাকতে চালু করা হচ্ছে মোবাইল ফোন সেবা। ফলে এখন থেকে কারাগার থেকেই স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন বন্দিরা।
জানা যায়, সাধারণ বন্দিরা এই সুবিধার আওতায় থাকলেও জঙ্গি আর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারও সঙ্গেই মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবে না।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে প্রথম চালু হচ্ছে এই সেবা। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সার্ভার স্থাপনসহ মোবাইল ফোন সেবার জন্য সেখানে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই সেবায় কোনও কারিগরি ত্রুটি রয়েছে কিনা তা এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কারা মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ বুধবার দুপুরে উদ্বোধনের পরই চালু হয়ে যাবে এই সেবা। এর সফলতার ওপর নির্ভর করে পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের অন্যান্য কারাগারে যুক্ত হবে মোবাইল ফোন সেবা।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসাইন টিনিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের সপ্তম পর্বে কারাবন্দিদের ফোনে কথা বলা সংক্রান্ত ‘প্রিজন লিংক’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এটুআই’র সহযোগিতায় একটি সফটওয়্যার সাজানো হয়েছে। এর মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। সেজন্য সফটওয়্যার তৈরি, সার্ভার স্থাপনসহ সকল প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন কোনও ত্রুটি আছে কিনা নিজেদের মধ্যে কথা বলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও কোনও বন্দি এর মাধ্যমে কথা বলেননি।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগার যে পদ্ধতিতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন কারাবন্দিরা তা হলো- বন্দি হিসেবে কেউ কারাগারে এলেই তার কাছ থেকে পরিবারের দুটি নম্বর নেয়া হবে। ওই দুটি নম্বরে মাসে দু’বার করে পাঁচ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলতে পারবেন একজন কারাবন্দি। কারাগারে ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভেরিফায়েড হওয়ার পর ওই দুটি নম্বরে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যাবে।
এই সেবা চালু হলে কারাগারে অবৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন টাঙ্গাইল জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসাইন। তিনি টিনিউজকে বলেন, এই নম্বর দুটি হতে হবে বন্দির মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা এমন একান্ত আপনজন। এর বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হবে না। বন্দিরা যেন পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে পারেন বা নিজের অবস্থা তাদের জানাতে পারেন, এজন্য এই মোবাইল ফোন সেবা চালু করা হচ্ছে। এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে স্বজনদের জানিয়ে রাখবেন কারাবন্দি কোন সময় কথা বলবেন। তাই তখন যেন তাদের চাইলেই পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারের অভ্যন্তরে স্থাপিত বুথ থেকে কথা বলার সুযোগ পাবেন বন্দিরা। তবে এই বুথের ফোন থেকে বন্দি চাইলেই কোনও নম্বরে ডায়াল করতে পারবেন না। একইভাবে কোনও ফোন কলও আসবে না। এর কারণ, মোবাইল সেবাটির জন্য বানানো সফটওয়্যারে আগে থেকে নির্দিষ্ট নম্বর দেয়া থাকবে। এজন্য সেগুলো ছাড়া অন্য নম্বরে ফোন কল ডায়াল করা যাবে না। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে টেলিফোন বুথ থেকে বন্দি চেষ্টা করলেও অন্য কোনও নম্বরে কথা বলতে পারবেন না। স্বজনদের সঙ্গে বন্দির পুরো কথোপকথনটির পুরোটাই রেকর্ডের পাশাপাশি কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই আলাপচারিতা লাইভ শুনবেন। টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চালু হতে যাওয়া এ সেবার জন্য প্রাথমিকভাবে থাকছে চারটি বুথ। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চার বন্দি। তাদের সংখ্যা হিসেবে ভবিষ্যতে বুথ বাড়ানো হবে। প্রাথমিকভাবে তিন/চারশ’ বন্দির জন্য একটি করে বুথ নির্ধারণ করা হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ