টাঙ্গাইল ও মধুপুরে নানা শঙ্কায় ১১ ইউপিতে নির্বাচন বৃহস্পতিবার

0 176

রঞ্জিত রাজ/ আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর ॥

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তিনটি ও মধুপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন টাঙ্গাইল সদরের কাতুলী, মাহমুদনগর ও ছিলিমপুর ইউনিয়নে এবং মধুপুর উপজেলার আউশনারা, মহিষমারা, কুড়ালিয়া, অরণখোলা, বেরীবাইদ, কুড়াগাছা, শোলাকুড়ি ও ফুলবাগচালা ইউনিয়নে ভোট গ্রহনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
এরআগে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে স্ব স্ব ইউনিয়নের প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে ভোটারদের মিষ্টি মধুর কথা শুনিয়েছেন, উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট পার্থনা করেছেন। নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন সুন্দর-স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত উন্নয়নশীল আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করার। ভোটাররাও হিসাব-নিকাশ করে প্রার্থীদের মধ্য থেকে মন্দের ভালোদের খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী মিছিল-মিটিং করেছেন। এদিকে, স্থানীয় নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তিনটি ও মধুপুরের আটটি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তিন ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ১৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে কাতুলী ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান সুমন আহমেদ, আওয়ামী লীগ মনোনীত ইকবাল হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম লাবলু, নূরুল ইসলাম ও হাসান আলী। মাহমুদনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ মনোনীত গোলাম সরোয়ার জাহান, বিএনপি মনোনীত আব্দুল করিম তালুকদার, জাতীয় পার্টি মনোনীত বদিউজ্জামান বাদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশীদ মিয়া, আবু হাশেম, আব্দুল করিম ও সেলিম রেজা।
ছিলিমপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান হাসমত আলী, বিএনপি মনোনীত হাফিজ উদ্দিন সরকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বাদল, হানিফ মিঞা, নাজমুল হক ও সাদেক আলী।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর নির্বাচনী সহিংসতা আশঙ্কার মধ্যেই ৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই)। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দফায়-দফায় বিদ্রোহী প্রার্থীর নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারপিট, নারী কর্মীদের শারিরীকভাবে লাঞ্চিত, নির্বাচনী অফিস, প্রচারণা মাইক ও বিলবোর্ড ভাংচুর এবং পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহী এবং বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের ভোটার সমর্থকরা।
বুধবার (১২ জুলাই) মধুপুর উপজেলার ৮ ইউপি নির্বাচনী এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বেরিবাইদ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জুলহাস উদ্দিনের নৌকা মার্কার নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের কর্মী সমর্থকদের উপর দফায়-দফায় হামালা, নারীকর্মীদের শারিরীকভাবে নাজেহাল করাসহ ১৫ কর্মী সমর্থককে আহত করা হয়। এরপর ওই দিনই বিকেলে নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীরকর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়। এর আগে গত (২ জুলাই) বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ও প্রচার মাইক ভাংচুর এবং নারী কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে নাজেহাল করার প্রতিবাদে মধুপুর ইউএনও অফিস ঘেরাও করা হয়। ইউএনও এর পক্ষ থেকে এসব ঘটনার বিচারের আশ্বাস দেয়া হলেও বুধবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত কোন সুরাহা করা হয়নি বলে বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদের এ প্রতিনিধিকে জানান। অথচ: এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী প্রার্থী ও সমর্থকরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী এলাকায় গত ১ সপ্তাহ যাবৎ বৃষ্টিপাতসহ দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। এসব কারণে ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দেয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার তাজুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোন শঙ্কা নেই ইন্শাআল্লাহ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে আউশনারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী নূরুল ইসলাম, বিএনপি আজহার আলী, কুড়ালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আহাম্মদ আলী, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মহি উদ্দিন ওরফে লেলেক মাষ্টার, বিএনপির খালিদুজ্জামান শামীম, জাপার রফিকুল ইসলাম, বেরিবাইদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের জুলহাস উদ্দিন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী আব্দুল কাদের, বিএনপির মঞ্জুরুল ইসলাম মজনু, শোলাকুড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এডভোকেট ইয়াকুব আলী, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী আখতার হোসেন, বিএনপির এডভোকেট মোশারফ হোসেন, ফুলবাগচালা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রেজাউল করীম বেনু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জামাল উদ্দিন, বিএনপির ফরিদ হোসেন, মহিষমারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কাজী মোতালেব, বিএপির বাদশা মিয়া, অরণখোলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আব্দুর রহিম, বিএনপির লস্কর আলী এবং কুড়াগাছা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ফজলুল হক ও বিএনপির শাহ্ আব্দুস সালাম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ