টাঙ্গাইল উৎসব ফিলিং স্টেশনের ছাদে কবুতরের বসবাস
কাজল আর্য ॥
উৎসব ফিলিং স্টেশনটির ছাদের দিকে তাকালেই যে কোন ব্যক্তি থমকে দাঁড়ান। ছাদের চারদিকে সারিবদ্ধভাবে টানিয়ে রাখা হয়েছে বাঁশের অসংখ্য ঝুড়ি। তাতে শতশত জালালি কবুতরের বাস। ছাদ ছাড়াও পাম্পের পাশের দালাল এবং জেনারেটর ঘরে রয়েছে কবুতরের বাসা। নিমিষেই দল বেঁধে উড়ে এসে ঝুড়িতে বসছে আবার বেড়িয়ে যাচ্ছে। কবুতরের ঝাঁক বেঁধে চলার অপূর্ব এ দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। পাম্পে তেল নিতে আসা যানবাহনের চালক-যাত্রীরা অভিভূত হন। এটা ভাল বাসার সাথে ভালবাসার বহি:প্রকাশ।
ব্যবসায়ীরা শুধু লাভ লোকসানের হিসেব করেন না। তাদেরও রয়েছে জীবের প্রতি মায়া মমতা। শান্তির প্রতিক কবুতরের জন্য বাসস্থানের বানিয়ে ব্যতিক্রম ভালবাসার প্রকাশ করেছেন আফজালুর রহমান মাহবুব (৬২) নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পৌলিতে অবস্থিত উৎসব ফিলিং স্টেশনের (তেলের পাম্প) সত্ত্বাধিকারী। তার বাড়ি বাসাইল পৌরসভার উত্তর পাড়ায়, থাকেন টাঙ্গাইল শহরে।
এই পাম্পে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত কাজ করেন তারাপদ সরকার। তিনি টিনিউজকে বলেন, কবুতরের থাকার জন্য আমাদের মাহবুব সাহেব এখানে ১০০ টির বেশি পাইছা (ঝুড়ি) দিয়েছেন। কমপক্ষে ২৫০ থেকে ৩০০ কবুতর এখানে থাকে। পাইছা ভেঙে গেলে আমরা আবার নতুন পাইছা লাগিয়ে দেই। আবার মাঝে মাঝে গমও খেতে দেই। ট্রাক চালক রাকিব হোসেন টিনিউজকে বলেন, অনেক পাম্পে তেল ভরি। কিন্তু কবুতরের জন্য এমন ব্যবস্থা দেখি নাই। কালিহাতী থানার পুলিশ সদস্য লক্ষ্মণ দাস টিনিউজকে বলেন, কবুতরের পাশাপাশি সরিষার দিনে মৌমাছির চাকও দেখি। সত্যি ব্যতিক্রম বিষয়। ঘাটাইলগামী ডা: আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী টিনিউজকে বলেন, যদি তারা এ কবুতর বিক্রি না করেন, তবে তাদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
টাঙ্গাইলের পাম্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ টিনিউজকে বলেন, জেলায় ছোট বড় ৫৫টি পাম্প রয়েছে। কবুতরের থাকার জন্য এতো বিশাল ব্যবস্থা কেউ করেন নাই। পশু পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে উৎসব ফিলিং স্টেশনের এ মহতি কাজে আমরা খুশি।
কবুতরের বাসস্থানের উদ্যোক্তা আফজালুর রহমান মাহবুব টিনিউজকে বলেন, ফিলিং স্টেশনটি বিগত ২০০৩ সালে স্থাপিত হয়। এর কয়েক বছর পর থেকেই জালালী কবুতর আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে অনেক কবুতর হয়ে যায়। আমি ছোট বেলায় শখ করে কবুতর পালতাম। সেই মায়া ভালবাসার জন্যই বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি। শান্তির প্রতিক কবুতর বিক্রিও হয় না খাওয়াও হয় না। আমি আরো একশ ঝুড়ি অচিরেই লাগিয়ে দিবো। সরিষার মৌসুমে প্রতিবছর ছাদে মৌমাছির ১০/১৫ টি চাক হয়। সময় শেষে ওরা চলে যায়।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া টিনিউজকে বলেন, ভাসমান জালালী কবুতরের জন্য তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। প্রয়োজনে আমাদের কাছে আসলে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো। পাখি ও পরিবেশ সুরক্ষায় এভাবেই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
Comments are closed.