টাঙ্গাইলে বিরতিহীন দর্জিপাড়া চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত

0 64

স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিরতিহীন চলছে সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ। দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। টাঙ্গাইল শহরের দর্জিপাড়াগুলোতে এমন ব্যস্ততা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। শহরের পাড়া মহল্লায় ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণী ও নারীদের পোশাক এখন বেশি তৈরি হচ্ছে। সারি সারি ব্যাগ আর হ্যাঙ্গারে ঝোলানো পোশাকে ভরে গেছে শহরের দর্জিপাড়া। অনেকেই কাজ করছেন সেহরি পর্যন্ত।
জানা যায়, ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট তৈরির যোগান দিচ্ছে শহরের নামকরা টেইলার্সগুলোয়। শবে বরাতের পর থেকে পোশাক তৈরির অর্ডার নেয়া শুরু হলেও বড় ট্রেইলার্সগুলো এখন আর কাজ নিচ্ছে না। তবে ১৫ রমজানের পর থেকেই অর্ডার নেয়া বন্ধ করেছে পাড়া-মহল্লার টেইলার্সগুলোও। এবার কাপড়ের দাম বৃদ্ধি এবং ঈদ উপলক্ষে দর্জিরাও বাড়তি মজুরি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।




টাঙ্গাইল শহরের আলী কমপ্লেক্স, শামসুর রহমান মার্কেট, মাহমুদুল হাসান মার্কেট, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফারুক আহমেদ মার্কেটসহ বিভিন্ন টেইলার্সে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কাপড় সেলাইয়ের মেশিনের শব্দ একটানা একঘেয়ে, নাকি ছন্দময় তা চিন্তার সুযোগও নেই তাদের। দর্জি দোকানদাররা টিনিউজকে জানান, ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরই এমনটা হয়। সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কাজও বাড়ে। কখনো এমনও হয় যে, ঘুমানোর সময়টুকুও থাকে না। কারণ রমজান শুরুর প্রথম থেকেই কাস্টমাররা কাপড় কিনে দিয়ে যান। সময়ের সঙ্গে তার চাপ আরও বাড়ে। ফলে সময়মতো কাপড় ডেলিভারি দিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।




টেইলার্স মালিকরা টিনিউজকে জানান, শহরের বিভিন্ন মার্কেটসহ সব মিলিয়ে দর্জি দোকান আছে হাজারখানি। এর মধ্যে নারীদের জামা তৈরির টেইলার্সই বেশি। এরপরই পুরুষদের টেইলার্স। তবে তুলনামূলক নারীরাই বেশি জামা তৈরি করতে দেন। আর পুরুষদের মধ্যে নানা অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্যুট তৈরির অর্ডার আসে। সেই সঙ্গে শার্ট, প্যান্ট এবং পাঞ্জাবিও অনেক মানুষ তৈরি করতে দেন। তবে ঈদে সবচেয়ে বেশি অর্ডার হয় নারীদের থ্রিপিস আর পুরুষদের পাঞ্জাবি পায়জামা। ফলে এগুলো যেহেতু ঈদকে সামনে রেখে দেওয়া হয় তাই ঈদের আগে তা ডেলিভারি দিতে হয় বলে চাপ বেশি থাকে।
কয়েকটি বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, কাটিং মাস্টার ও কারিগরদের মহাব্যস্ততা। কথা হয় বিনিময় টেইলার্সের মাস্টার জহির খানের সাথে। তিনি টিনিউজকে জানান, নারীদের সব ধরনের পোশাকই ফরমায়েশ অনুযায়ী তৈরি করে থাকেন তারা। থ্রি পিস, কামিজ, সেলোয়ার, পালাজ্জো, প্যান্ট, শার্ট, ব্লাউজের ফরমায়েশ পাচ্ছেন। এবার কিছুটা জমকালো ও উজ্জ্বল রঙের তবে আরামদায়ক পোশাক পছন্দ করছেন ক্রেতারা। পোশাকের সঙ্গে থাকা নমুনা-নক্সা অনুযায়ী তারা এমব্রয়ডারির কাজও করে দিচ্ছেন। সোহেল ফকির টিনিউজকে জানান, তারা ১৫ জন কারিগর নিয়ে রাত-দিন কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত যত ফরমায়েশ পেয়েছেন তা আশানুরূপ। ১৫ রমজান থেকে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফারুক আহমেদ মার্কেটের দোতলায়ও রয়েছে বেশ কিছু দর্জিঘর। এখানে পুরুষদের পোশাক তৈরি করে শাহেনশাহ টেইলার্স, ফাইভ স্টার, রফিক টেইলার্স, টিটু টেইলার্সসহ কয়েকটি দর্জির দোকান। শাহেন শাহ টেইলার্স এর মাস্টার নাছির উদ্দিন টিনিউজকে জানান, তাদের ৫ জন কারিগর ঈদের পোশাক বানাতে কাজ করছেন। এখন আর শার্টের অর্ডার খুব বেশি পান না। বেশির ভাগ কাজই পাঞ্জাবি-পায়জামার। সুতি, কাতান ও গরমে আরামদায়ক এমন কাপড় এবার পছন্দ করছেন ক্রেতারা। আজাহার আলি টিনিউজকে জানান, গত বছর এই সময় নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার কাজ কিছুটা কম বলে সম্ভব হলে চাঁদরাত পর্যন্ত পোশাক তৈরি করে দেবেন তারা।




টেইলার্সে কাপড় বানাতে আসা মীম আক্তার টিনিউজকে জানান, বর্তমান সময়ে সেলাইয়ে টেইলার্সের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। আগে যে জামা তিনশ’ টাকায় সেলাই হতো এখন তা সাড়ে চারশ’। ফলে কাপড় সেলাই করলেও তার সংখ্যা কমেছে। আগে চারটা বানালে এখন দুইটা বানাচ্ছেন। কারণ নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে বাজেট ছোট হয়ে আসছে। বিনিময় লেডিস টেইলার্সের মাস্টার টিনিউজকে জানান, তারা এখন সকাল থেকে বিরতিহীন কাজ করছেন। মার্কেট খোলার পর থেকে বন্ধের পূর্ব পর্যন্ত কাজের সঙ্গে নতুন অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদের সময়ই ভালো ব্যবসা হয়। এজন্য বলা যায় সারা বছর তারা এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। সুতা ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে মজুরি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে যে কাপড়ে প্রতিটিতে কারিগরকে ৪০ টাকা মজুরি দেওয়া হতো এখন তাতে ৭০ টাকা দিতে হয়। ফলে কাস্টমারের উপরও এর প্রভাব পড়েছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ