টাঙ্গাইলে তরুণীরা ছুটছেন এখন গয়নার দোকানে ॥ রাত পোহালেই ঈদ

0 89

স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাত পোহালেই ঈদুল ফিতর। ঈদ আনন্দকে জোগান দিতে কেনাকাটার যুদ্ধে ক্লান্তিহীন ছুটছেন টাঙ্গাইলবাসী। এখন নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না কিনতে তরুণীরা ছুটছেন অলংকারের দোকানে। কেউ নিজের জন্য, আবার কেউ উপহার দেওয়ার জন্য গয়না কিনছেন। দামে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হওয়ায় ঈদের বাজারে চলছে ইমিটেশনের গয়নার দাপট। এসব গয়না দেখতে একেবারে সোনার মতোই চকচকে ও দৃষ্টিনন্দন। এসব কিনতে দোকানে ভিড় করছেন নারী ও তরুণীরা। তবে উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি আগ্রহ সোনা কিংবা ডায়মন্ডের গয়নায়।




টাঙ্গাইল শহরের, ছয়আনী বাজার, পাঁচ আনী বাজার, নিউ সমবায় মার্কেট, আলী কমপ্লক্স, সিটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গয়নার দোকানগুলোতে বেশ ভিড়। শপিংমলগুলোতে গয়নার দাম নির্ধারিত থাকলেও ছোট দোকানগুলোতে তা থাকে না এবং এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক, জুতা, কেনা হলেও ম্যাচিং করে গয়না কেনা হয়নি শহরের আদালত পাড়া এলাকার বাসিন্দা হুমায়রা হাসান। নিজের ও তার দুই মেয়ের জন্য কিনবেন রঙিন চুড়ি। তাই গয়না কিনতে এসেছেন আলী কমপ্লেক্স এ পারমিতা জুয়েলারিতে। সেখানে পোশাকের মার্কেটের পাশাপাশি গয়নার বাজারেও অনেক ভিড়। তীব্র গরম ও প্রচ- ভিড় ঠেলেই তিনি গয়নার শোরুমে এসেছেন।




ম্যাচিং করে কিনেছেন ইমিটেশন ও রুপার গহনা। তিনি জানান, এবার নতুন নতুন ডিজাইনের গহনা এসেছে। দোকানিরা এগুলো ইন্ডিয়ান বলে দাম হাঁকাচ্ছেন অনেক বেশি। কিন্তু দরদাম করে অনেক কমে কেনা যায়। দেশে প্রডাকশন হয় মাত্র পাঁচ শতাংশ। ৯৫ শতাংশ আসে চায়না ও ভারত থেকে। কিন্তু উন্নত পণ্যগুলো বিদেশ থেকেই আসে। দেশে উৎপাদিত ইমিটেশন পণ্যের মান অতটা ভালো হয়না। কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য কারণে সোনালি রঙে মোড়ানো এসব অলঙ্কারের বাজার খারাপ হয়ে গেছে । ডলার সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণকালীন পরিস্থিতিতে আমদানি আরও সীমিত হয়ে গিয়েছিল। ঈদ উপলক্ষে আবার আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ডলারের দাম বাড়ার কারণে অলঙ্কারের দামও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বিক্রিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে ।




সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানিরা গলার হার, চুড়ি, টিকলি, নাকফুল, পায়েল, নূপুর, গলার চেন, বাজুবন্ধ, ব্রেসলেট, আংটি, নথ, কানের দুল, লকেট, ঝুমকাসহ অসংখ্য গহনার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এসবের কোনোটিই আসল স্বর্ণ বা রূপার তৈরি নয়। তামা, পিতল বা ব্রোঞ্জের মতো সহজলভ্য ও কমদামি ধাতু দিয়ে নিখুঁতভাবে তৈরি করার পর দৃষ্টিনন্দন করতে গ্যালভানাইজিং পদ্ধতির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে সোনালি প্রলেপ। ব্যস এটুকুতেই সোনার বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে ইমিটেশন বা ‘নকল সোনা’। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নারী ও তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ইমিটেশনের তৈরি এসব গহনা।




বিক্রেতারা বলছেন, দামে কম ও মানে ভালো হওয়ার কারণে বর্তমানে স্বর্ণের জায়গা অনেকটা দখল করে নিয়েছে এসব ইমিটেশনের গহনা। একটা সময় নারীর অলংকার বলতেই শুধু স্বর্ণ ও রুপার গহনা বোঝালেও গত কয়েক বছরে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। শুরুতে ইমিটেশনের গলার চেইনসহ ছোট ছোট কয়েকটি গহনা তৈরি করা হলেও এখন এর বিস্তার ঘটেছে। এমন কোনো গহনা নেই যা ইমিটেশনের হয় না। বিয়ে, গায়ে হলুদ, পার্টি কিংবা ঘরোয়া অনুষ্ঠানসহ সবকিছুতেই ইমিটেশনের ব্যবহার উপযোগী গহনা রয়েছে। সোনা-রুপার গহনার চেয়ে দাম অনেকটা কম হওয়ায় ক্রেতাসাধারণের মধ্যে ইমিটেশনের গহনার চাহিদাই বেশি।




কথা হয় খালপাড় রোডের গহনা বিক্রেতা হারুন আহমেদের সঙ্গে। বললেন, রোজার শুরু থেকে কাপড়ের দোকানে ক্রেতার ভিড় বেশি ছিল। তখন আমরা বেশ হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু এখন গহনার দোকানেও ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। এদের মধ্যে তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। তিনি বলেন, সবাই ঈদের শাড়ি বা থ্রি-পিসের সঙ্গে ম্যাচিং করে পরতে অলংকার নিচ্ছেন। হোয়াইট গোল্ডের আদলে বানানো গহনার চাহিদাও বেশ ভালো। এসব গহনার দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে হওয়ার কারণে ভালো সাড়া পাচ্ছি। তিনশ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা দামের গহনা রয়েছে। দাম নির্ভর করছে এর ওজন ও স্টাইলের ওপর। আহসান হাবিব নামের আরেক বিক্রেতা জানান, আংটির চাহিদা বেশ। রুপা দিয়ে নির্মিত আংটির মাঝে রক্ত প্রবাল, রুবি, পান্না, হীরা, নীলম, পোখরাজ পাথরের আংটি রয়েছে। মানভেদে দামেও রয়েছে তারতম্য।




ক্যাপসুল মার্কেটে আসা আয়শা আক্তার বলেন, পরিবারের সব সদস্যের কেনাকাটা শেষ করেছি। এখন আমার জন্য পছন্দ করছি গহনা। তবে গয়নার দাম অনেক বেশি। ফলে কিনতে গেলেও একটু ভাবনা চিন্তা করতে হচ্ছে। মারিয়া বলেন, ইমিটেশনের গয়নার চাহিদাই চুড়ি, দুল, আংটি, গলার মালা পছন্দ করছি। বেশি দামের জন্য বেশ কিছু দোকান ঘুরতে হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ