টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ

230

স্টাফ রিপোর্টার ॥
১৯৭২ সালের (২৪ জানুয়ারী) বঙ্গবন্ধুর কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমা দেওয়ার ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি। সরকারের দুই নীতিনির্ধারক ব্যক্তি অনুষ্ঠানে যোগদান করায় কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগের জোটে ভিড়ার ইঙ্গিত বলে অনেকেই মনে করছেন।




গত (২৩ ডিসেম্বর) কাদের সিদ্দিকী সপরিবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ছিল কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলে প্রথম কোনো সভা। সভায় কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।




এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা অনুষ্ঠানে যোগদান করলেও জেলা আওয়ামী লীগের কেউ অনুষ্ঠানে ছিলেন না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান খান ফারুককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এজন্য তাঁকে আর শ্রদ্ধা করবেন না। ফজলুর রহমান খান বন্দুক হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তাকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একুশে পদক দেওয়া সঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়াও টাঙ্গাইলে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের সংসদ সদস্য হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই বলে উল্লেখ করেন।
জেলার নেতাদের না জানিয়ে কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার যোগদান, অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে কাদের সিদ্দিকীর নেতিবাচক মন্তব্য করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।




টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান আনছারী বলেন, গত (২৪ জানুয়ারী) ছিল একটি বিশেষ দিন। ওই দিনে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ ক্রমে মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতা এসেছেন। কাদের সিদ্দিকী জোটে আসার ইঙ্গিত পেয়ে আমরা খুশি হয়েছি। আরো খুশি হতাম যদি জেলা আওয়ামী লীগকে জানিয়ে আসতেন। কিন্তু মন্ত্রীর সামনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অমার্জনীয় ও নিন্দনীয়। তার মুক্তিযুদ্ধের পরের সব ভুমিকা বিতর্কিত। তিনি রাজাকার মীর কাশেমের দিগন্ত টেলিভিশনে উপস্থাপনা করেছেন। জামায়াত বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছেন। জিয়াউর রহমান যেমন মুক্তিযুদ্ধের কলংক তেমন কাদের সিদ্দিকীও। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকে জোট বদ্ধ করলে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ক্ষতির বিষয়টিও কেন্দ্রকে ভাবতে হবে।




মন্ত্রীর সামনেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিতর্কিক মন্তব্য করলে মন্ত্রী বিব্রত হন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবীরের বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে, তা আমার জন্য বিব্রতকর। আমরা এই অনুষ্ঠানকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে চাই। সম্পর্কের কোনো অবনতি থাকলে তা জাতীয়ভাবে নিতে চাই না।
সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, আওয়ামী লীগের সতীর্থ হলে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও দলের নেতাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারতেন না। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা মানে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে অমান্য করা।




জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান বলেন, বহুদিন পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর গত ডিসেম্বরে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রীর উপস্থিতিতে দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আমরা হতাশ হয়েছি।




জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট হওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। বঙ্গবন্ধুর কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীর নেতার আগমন সম্পর্কে আমাদের কেউ জানায়নি। আমরা দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে নেই। তবে জেলায় দলের শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, সে বিষয়টিও কেন্দ্রীয় নেতারা দেখবেন।
বিগত ১৯৯৯ সালে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে যান। তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

 

Comments are closed.

ব্রেকিং নিউজঃ